ভয়াবহ
করোনা মহামারির মধ্যে আবারও এসেছে কোরবানির ঈদ। ভয়-শঙ্কার মধ্যেই মানুষ
ঈদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বসতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। অনলাইনে
সরাসরি খামারগুলো থেকেও পশু কিনছেন অনেকে। পশু পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার
ঠিকানায়। সংক্রমণ রোধে হাটগুলোতে সতর্কতামূলক অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পশু আনা-নেওয়ার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খামার মালিক,
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, পশু আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা স্বাভাবিক
রাখা গেলে গত বছরের তুলনায় বাজার অনেক ভালো থাকবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের
প্রত্যাশা পূরণ হবে।
কোরবানির পশু, পশুর চামড়া, পশু ও চামড়া পরিবহন ও
আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির বাজার মিলিয়ে দেশে কোরবানির বাজার রয়েছে ৭৫ হাজার
কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা। অনেক
কৃষক সারা বছর একটি বা দুটি গরু বা ছাগল পালন করেন কোরবানির হাটে একটু
ভালো দামে বিক্রি করার আশায়। দেশে এখন যথেষ্ট পরিমাণে গরু-মহিষের খামার গড়ে
উঠেছে। একসময় কোরবানির বাজার অনেকাংশেই ভারত থেকে আসা গরু-মহিষের ওপর
নির্ভরশীল ছিল। এখন কোরবানির সময় চাহিদার তুলনায় বেশি পশু দেশেই উৎপন্ন হয়।
এসব খামারে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। গত বছর করোনা মহামারির
কারণে বাজার তেমন জমেনি। অনেকেই পশু কোরবানি থেকে বিরত ছিলেন। তাই খামারি ও
কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারেননি। নতুনভাবে গড়ে ওঠা এই শিল্পটিও হুমকির
মুখে পড়েছিল। আশা করা যায়, গত বছরের তি কাটিয়ে এ বছর তারা কিছুটা হলেও
লাভের মুখ দেখতে পারবেন। অবশ্য অনেক ব্যবসায়ীর মনে এক ধরনের ভয়-আশঙ্কাও কাজ
করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু-মহিষ ঠিকমতো আনা-নেওয়া করা যাবে কি
না, হাটে আনলে উপযুক্ত দাম পাওয়া যাবে কি না, এমনি আরো অনেক কিছু। আরেকটি
শঙ্কা রয়েছে চামড়ার বাজার নিয়ে। বেশ কয়েক বছর ধরেই চামড়ার বাজার নি¤œমুখী।
২০১৯ সালে মানুষ অনেক চামড়া ফেলে দিয়েছে অথবা মাটিতে পুঁতে দিয়েছে। অনেকেই
এর জন্য চামড়া সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন এবং তাঁরা সরকারের কাছে কাঁচা চামড়া
রপ্তানির দাবি জানিয়েছেন।
ঈদের আর মাত্র দিন দশেক বাকি। পশুর হাটে
ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপদ বিচরণের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। রাস্তায়
বিক্রেতারা যাতে চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো হয়রানির মুখোমুখি না হন, তা দেখতে
হবে। গরিব-মিসকিনদের হক যে কোরবানির চামড়া তার বাজার যাতে ঠিক থাকে সে জন্য
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি, করোনার মধ্যে সব ধরনের
সতর্কতা অবলম্বন করেও মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারবে।