শিথিল লকডাউনে ভার্চুয়ালি চলবে বিচার
Published : Thursday, 15 July, 2021 at 12:00 AM
লকডাউন তুলে নেওয়ায় অধিকাংশ আদালতে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ চলবে।
তবে নি¤œ আদালতে সাকসেশন ও অভিভাবকত্ব নির্ধারণ বিষয়ক মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি করা যাবে শারীরিক উপস্থিতিতে।
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা স্বাভাবিক সময়ের মতো সংশ্লিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনালেও শারীরিক উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করে আবেদন করতে পারবেন।
অন্য সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে বিচার চলবে ভার্চুয়ালি।
হাই কোর্টেও ভার্চুয়াল আদালতে দেওয়ানি, ফৌজদারি দরখাস্ত, আপিল, রিভিশন ও অন্যান্য মামলার শুনানি ও বিচারকাজ চলবে।
কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন লকডাউন শিথিল রাখার ঘোষণা সরকার দেওয়ার পর বুধবার সুপ্রিম কোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ জারি হলে ১ জুলাই থেকে নি¤œ আদালতে বিচার বন্ধের সিদ্ধান্ত এসেছিল।
তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় প্রত্যেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী জেলা বা মহানগরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পাশাপাশি ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারিক কাজ সীমিত পরিসরে চলছিল।
বুধবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আগামী ১৫ জুলাই হতে ২২ জুলাই শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে দেশের অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহ আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি আইন, ২০২০ এবং এই কোর্ট (সুপ্রিম কোর্ট) কর্তৃক জারিকৃত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি অনুসরণপূর্বক সকল প্রকার দেওয়ানি ও ফৌজদারি দরখাস্ত/আপিল/রিভিশন/বিবিধ মামলাসহ সকল প্রকার শুনানি গ্রহণ (সাক্ষ্য গ্রহণ ব্যতীত) ও নিষ্পত্তি করবেন।”
শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকাজ চালানোর বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে অধস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শারীরিক উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণপূর্বক সাকসেশন ও অভিভাবকত্ব নির্ধারণ বিষয়ক মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি করা যাবে।”
আসামি আত্মসমর্পণের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ অধস্তন ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে শারীরিক উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করে আবেদন দাখিল করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে শুনানির পদ্ধতি ও সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ ও সমন্বয় করতে বলা হয়েছে, যাতে আদালত প্রাঙ্গণ এবং আদালত ভবনে জনসমাগম না ঘটে।
শারীরিক উপস্থিতিতে শুনানির সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী ছাড়া অন্য কোনো আইনজীবী এজলাস কক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না। একটি আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী এজলাস ছাড়ার পর বিচারক পরবর্তী দরখাস্ত শুনানির জন্য গ্রহণ করবেন।
তবে জামিন শুনানি বা মামলার অন্যান্য কাজে হাজতি আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
হাজতি আসামির রিমান্ড শুনানির ক্ষেত্রে আসামিকে ভার্চুয়ালি দেখে ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড শুনানি নিতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রত্যেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেটকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করে যেতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ৩৮টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন।
বেলা সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা এসব বেঞ্চে বিচারকাজ চলবে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রধান বিচাপতির এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, “শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে শুধু আগামী ১৫ জুলাই সকাল ১০-৩০ মিনিট হইতে বিকাল ৪-১৫ মিনিট পর্যন্ত ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকাজ পরিচালনার জন্য নি¤েœ উল্লেখিত বেঞ্চসমূহ গঠন করা হইল।”
এরপর ক্রম অনুসারে ৩৮টি বেঞ্চের তালিকা দেওয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতির আদেশে। এতে দেখা যায় ৩৮টি ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চের মধ্যে দ্বৈত বেঞ্চ ২৫টি, বাকি ১৩টি একক বেঞ্চ।
কঠোর লকডাউনের মধ্যে বুধবার পর্যন্ত হাই কোর্টে তিনটি একক বেঞ্চ এবং প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে বিচারকাজ চলে।
লকডাউন ২২ জুলাই পর্যন্ত শিথিল থাকছে। ঈদের ছুটি শেষে আবার কঠোর লকডাউন জারি হবে বলে সরকার জানিয়েছে।