স্টাফ
রিপোর্টার ॥ বছর ঘুরে আবারও এলো পবিত্র ঈদ-উল আজহা বা কোরবানির ঈদ।
আগামীকাল বুধবার ত্যাগের মহিমা নিয়ে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঘরে ঘরে
পালিত হবে ঈদ উৎসব। সারাদেশে টানা ১৭ মাস ধরে চলছে করোনা সংক্রমণ।
ইতোমধ্যেই দেশে করোনাক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় ১৮ হাজার এবং আক্রান্ত
হয়েছেন ১১ লাখেরও বেশি মানুষ। এরকম এক পরিস্থিতিতে মানুষের মনে আনন্দ নেই।
অনেকেই স্বজন হারানোর বেদনায় শোকার্ত। তবুও ঈদ উৎসবের প্রস্তুতি নিয়েছে
দেশের মানুষ। বুধবার সকালে ঈদের নামাজ শেষে গবাদি পশু কোরবানির মাধ্যমে
মহান আল্লাহর আনুগত্য এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বহির্প্রকাশ ঘটাবেন
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। তবে করোনার কারণে মানতে হবে নানা বিধিনিষেধ।
ঈদ-উল-আজহা
উপলক্ষে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের
বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু কেনা-বেচা চলছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি
বিবেচনায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১২ জুলাইয়ের জারি করা বিধিনিষেধ অনুসরণ
করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র ঈদ-উল-আজহার নামাজ আদায়ের জন্য
মসজিদের খতিব-ইমাম, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়েছে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ইতোমধ্যেই সামর্থবান মুসলমানদের অনেকেই যার যার
সাধ্য অনুযায়ী কোরবানির পশু ক্রয় করেছেন। এ ছাড়া অনেকে অনলাইনেও কোরবানির
পশু ক্রয় করছেন। রাজধানীসহ সারাদেশের গ্রামেগঞ্জে, অলি-গলিতে দেখা যাচ্ছে
কোরবানির পশু। প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুসারে এবার ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬
হাজার ৭৬৫টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর
পর আগের ৩টি ঈদের মতো এবারও ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করার জন্য নির্দেশনা
দেয়া হয়েছে। ফলে করোনার কারণে ঈদ-উল-আজহায়ও ঈদগায়ে হচ্ছে না কোন জামাত।
মসজিদেই আদায় করতে হবে নামাজ। নামাজ শেষে কোলাকুলির দৃশ্যও চোখে পড়বে না।
সামাজিক দূরত্ব মেনে এক কাতার অন্তর তিনফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়
করতে হবে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা দেশ-জাতিসহ সারা বিশ্বের মুসলমানের জন্য
মোনাজাত করবেন। এর পর পশু কোরবানি করবেন। রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই
কোরবানি করার জন্য ইতোমধ্যে সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রতিটি এলাকার পাড়া-মহল্লায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
মুসলমানদের
দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আজহায় এবারও করোনার কারণে হাইকোর্ট
প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগায়ে ঈদের প্রধান জামাত হবে না। জাতীয় ঈদগায়ের পরিবর্তে
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে দেশের প্রধান ঈদ জামাত। বায়তুল
মোকাররমে এবার ঈদ-উল-আজহার ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রথম
ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বুধবার সকাল ৭টায়। এতে ইমাম থাকবেন বায়তুল মোকাররম
জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান।
মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।
এর পর
সকাল ৮টায় হবে দ্বিতীয় জামাত। এতে ইমাম থাকবেন বায়তুল মোকারমের পেশ ইমাম
হাফেজ মুফতি মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী। মুকাব্বির থাকবেন মুয়াজ্জিন হাফেজ
কারী কাজী মাসুদুর রহমান। সকাল ৯টায় হবে তৃতীয় জামাত। পশ ইমাম হাফেজ
মাওলানা এহসানুল হক এই জামাতে ইমামতি করবেন, মুকাব্বির থাকবেন হাফেজ কারী
হাবিবুর রহমান মেশকাত। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ জামাত। চতুর্থ
জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দীন কাসেম, মোকাব্বির হবেন
মুয়াজ্জিন কারী মো. ইসহাক। বেলা পৌনে ১১টায় ৫ম ও শেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
এতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর
রহমান খান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের প্রধান খাদেম মোঃ
শহীদুল্লাহ। এই ৫টি জামাতে কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে
দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ
আব্দুল্লাহ।
এদিকে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সৌদি আরবে ঈদ উৎসব।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ ২০ জুলাই মঙ্গলবার
দেশের বিভিন্ন এলাকার কিছু মানুষ ঈদ-উল-আজহা পালন করছেন। চাঁদপুরের বেশ
ক’টি গ্রাম এবং মাদারীপুর ও চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, জামালপুর, বান্দরবান,
পিরোজপুর, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, শেরপুর ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন
এলাকার কিছু মানুষ ঈদ-উল-আজহা উদযাপন করছেন।
ঈদের ছুটির দিনগুলো
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি
জীবন-জীবিকার একটা বিষয়ও রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা লকডাউন শিথিল করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে আশা করব, ঈদের সময় কয়েকটা
দিন আমরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব। আর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ
হোসেন বলেছেন, ঈদের পর লকডাউন কঠোর থেকে কঠোরতর হবে। ২৩ জুলাই থেকে কঠোর
লকডাউনের আওতায় আসবে গোটা দেশ। তবে কোরবানিকে ঘিরে আমাদের একটি বিশাল
অর্থনীতি রয়েছে। সব কিছু বিবেচনা করে বিধি-নিষেধ শিথিল করতে হয়েছে। তবে
আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
গত বছর ৮ মার্চ থেকে দেশে করোনা
সংক্রমণ শুরু হয়। এর পর এই করোনাভাইরাস দেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে। এখন
প্রতদিনই ১০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস
থেকে রক্ষা পেতে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও ঈদ ও জীবিকার
প্রয়োজনে তা এখন শিথিল করা হয়েছে। টানা ১৭ মাস দেশের মানুষ করোনার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করছে। অনেক মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে খুশির
বারতা নিয়ে এসেছে ঈদ-উল-আজহা। হাজারো কষ্টের মধ্যে থেকেও ঈদের দিন আনন্দের
বহির্প্রকাশ থাকবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে।
পবিত্র ঈদ-উল-আজহা
উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা বাণীতে তাঁরা দেশবাসীকে পবিত্র
ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি
কামনা করেন। কোরবানির মহান ত্যাগে বলীয়ান হয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে
সবার প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয নেতা বেগম রওশন
এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও
সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ
পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল
কুমার চ্যাটার্জী দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ত্যাগের অনন্য মহিমার
দিন ঈদ-উল-আজহা। বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান পবিত্র ধর্মীয় ও সামাজিক
অনুষ্ঠানও এটি। অনেকেই সাধ্যমতো কোরবানির পশু কিনছেন। এ ছাড়া মার্কেট
দোকানপাটসহ সর্বত্রই মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত। আর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক
থাকায় শহর ছেড়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ যাচ্ছে গ্রামের বাড়িতে।
স্বাস্থ্যবিধি
মেনেই রাজধানী ঢাকায় অন্যবারের ন্যায় এবারও বসেছে কোরবানির ১৯টি পশুর হাট।
তবে গতবারের মতো এবার পশুহাটের কেনাবেচায় আনন্দ নেই। পরিবারের সবাই
দলবেঁধে ছুটতে পারছে না কোরবানির পশু কিনতে। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পশুর
হাটে একসঙ্গে দু’জনের বেশি প্রবেশ করা যাচ্ছে না। ফলে এবার হাটে কেনাবেচা
থাকলেও মানুষের ভিড় তুলনামূলক কম। এবার অলনাইনেও জমে উঠেছে পশু কেনাবেচা।
প্রাণিসম্পদ
অধিদফতর জানিয়েছে, কোরবাণিযোগ্য পশুর যোগান চাহিদার চেয়ে বেশি রয়েছে। এবার
১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। তাই
এবার কোরবানির পশুর কোন সঙ্কট হচ্ছে না। সাধারণত আগের বছরের জবেহ হওয়া পশুর
সংখ্যার সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ যোগ করে চলতি বছরের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এবার সবারই আয়-রোজগার কমেছে, তাই চাহিদা
আরও কমতে পারে।
এবারও ঈদ-উল-আজহার নামাজ মসজিদে বসেই আদায় করতে হবে। এ
বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় আগেই নির্দেশনা দিয়েছে। ১২
জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, মহামারী
করোনাভাইরাসের কারণে ঈদ-উল-আজহার নামাজ আদায়ে ভাইরাস সংক্রমণ রোধে মসজিদে
জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলানো পরিহার করতে হবে। এতে
আরও উল্লেখ করা হয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মুসল্লিদের জীবন ঝুঁকি
বিবেচনা করে এ বছর ঈদ-উল-আজহার জামাত ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে
নিকটস্থ মসজিদে আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত আদায় করা
যাবে।
ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের
পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা
প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা
থেকে অজু করে মসজিদে আসতে হবে। অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে
হাত ধুতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদে অজুর স্থানে
সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড
স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবানপানি রাখতে হবে। ঈদের নামাজের
জামাতে আগত মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত
জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে
দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে
এবং এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। শিশু, বৃদ্ধ, যে কোন ধরনের
অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে
অংশগ্রহণ করবেন না। সর্বসাধারণের সুরক্ষার নিমিত্ত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,
স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই
অনুসরণ করতে হবে। নামাজ শেষে পশু কোরবানির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ ছাড়া রাজধানীর মানুষকে
সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশনা মানতে হবে।
পবিত্র হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী,
প্রতিবছর জিলহজ মাসের দশ তারিখে ঈদ-উল-আজহার নামাজ আদায় করতে হয়।
ঈদ-উল-আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ
করা। বিশ্ব মুসলিম ময়দানে নামাজ আদায়ের পর যার যা সাধ্য ও পছন্দ সে অনুযায়ী
পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আরবী ‘আজহা’ এবং ‘কোরবান’ উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে
উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ,
নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা ও অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া। ইসলামী বিধান
অনুযায়ী জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন একদিন কোরবানি করা যায়।
গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা শ্রেণীর অন্য প্রাণীও কোরবানি করা যায়।
কোরবানিকৃত পশুর ৩ ভাগের ১ ভাগ গরিব-মিসকিন, একভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে
বিলিয়ে দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে কোরবানির ইতিহাস অতি
প্রাচীন। মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আঃ)কে ৎার শেষ বয়সে প্রিয়তম পুত্র ইসমাইল
(আঃ)কে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ছেলেকে কোরবানি দেয়া ৎার জন্য
এক কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু তিনি তাঁর মহান রবের হুকুমে নত হলেন। নিষ্পাপ
পুত্র ইসমাইলও (আঃ) নিজেকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন।
এক পর্যায়ে পিতা তাঁর পুত্রকে জবাই করতে যখন উদ্যত ঠিক তখনই মহান আল্লাহর
কাছে ইমানের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। আল কোরানে এই মহিমান্বিত
ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে
চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আঃ) তাকে বললেন, হে বৎস্য! আমি
স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে কোরবানি করছি। এখন তোমার অভিমত কী? সে বললো, হে পিতা,
আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ
করলেন এবং ইব্রাহীম (আঃ) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন তখন আমি তাকে
ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি
এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি
তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক জন্তু।’ প্রায় চার হাজার বছর আগের
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে বিশ্ব মুসলমানরা ঈদ-উল-আজহায়
পশু কোরবানি করেন।
ধর্মীয় উৎসবসহ সব উৎসবের মধ্যে কোরবানির ঈদ উৎসব
সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। কেননা এই সময় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালবাসা পাওয়ার
জন্য পশু কোরবানি করেন মুসলমানরা। আবার পশু কেনা-বেচার জন্য দেশের নানান
প্রান্তে হাট-বাজার বসে থাকে। মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সারাদেশে বেশ
ক’দিন কঠোর লকডাউন চলমান ছিল এর ফলে হাট-বাজারসহ প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ
ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। কিন্তু ঈদ উৎসব উপলক্ষে সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৪
জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়। গণপরিবহনসহ সব কিছুই কয়েকদিনের জন্য আগের
মতো চালু করা হয়। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে যানবাহনসহ শপিংমলগুলোতেও ব্যাপক
জনসমাগম ও উপস্থিতি দেখা যায়।
এবার করোনা মহামারীর কারণে ঈদ-উল-আজহা
উৎসব পালন করতে গিয়ে সবাইকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যেন একটু ভুলের
কারণে ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। সঠিকভাবে মাস্ক পরে ও সামাজিক
দূরত্ব বজায় রেখে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলা সবার জন্যই খুবই জরুরী।