লকডাউনের বিধিনিষেধ আরো ৫ দিন
Published : Wednesday, 4 August, 2021 at 12:00 AM
করোনাভাইরাসের
বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশে চলমান লকডাউনের সময়সীমা আরো পাঁচ দিন
বাড়িয়ে ১০ অগাস্ট পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী এক সপ্তাহ
ব্যাপকভিত্তিক টিকা দান কার্যক্রম পরিচালনার পর ১১ অগাস্ট থেকে দোকানপাট,
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস খুলবে। সীমিত পরিসরে ‘রোটেশন করে’ যানবাহন চলবে।
তবে টিকা না নিয়ে কেউ কাজে যোগ দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
কোভিড পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মোজাম্মেল
বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগামী এক সপ্তাহে এক কোটির বেশি মানুষকে টিকা
দেবে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে ন্যূনতম দুটি করে কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। ফলে
আশা করছি কষ্ট করে ভ্যাকসিন নেওয়ার পেছনে দৌঁড়াতে হবে না।
“প্রায় ১৪
হাজার কেন্দ্রে একসাথে সপ্তাহব্যাপী ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেখানে বয়স্কদের
অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শ্রমজীবী মানুষ, দোকানদার, বাসের হেলপারদের ভ্যাকসিন
দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন না দিয়ে কেউ কোনো কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। যার যার
এলাকা থেকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।”
মন্ত্রী বলেন, “কেউ ভ্যাকসিন নিয়েছে
কিনা, সেই তথ্য ওয়েবসাইটে চলে যাবে, কেউ মিথ্যা বলতে পারবে না। দোকানপাট
খোলার আগে ৭, ৮, ৯ অগাস্ট তিন দিন সুযোগ রাখলাম। এই সময়ের মধ্যে যাতে
ভ্যাকসিন নিতে পারে সেই সুযোগ দিচ্ছি। ১১ অগাস্ট থেকে যাতে দোকানপাট খুলতে
পারে সভা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।”
দেশেই করোনাভাইরাসের টিকা
উৎপাদনের লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস কত দিন চলবে কেউ
জানে না। যত শিগগির সম্ভব নিজেরা বা অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে যাতে
ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারি। সেটা হলে সবাইকে ভ্যাকসিন দিয়ে দেব। চেষ্টা করব
যাতে ৪/৫ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদন করা যায়।”
আর গুরুতর কোভিড
রোগীদের জন্য হাসপাতালে আইসিইউ সঙ্কট কাটাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের
কনভেনশন সেন্টারে আগামী শনিবার থেকে ফিল্ড হাসপাতাল চালু হবে বলে জানান
তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে
বাংলাদেশে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের পর
রেকর্ড হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও
বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন তা শিথিল করা
হয়েছিল।
ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার লকডাউন শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে।
সরকার
আগে ঘোষণা দিয়েছিল, ৫ অগাস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে শিল্প কারখানা,
সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের অফিস আদালত বন্ধ থাকবে।
ঈদের পর
এবারের লকডাউন ‘কোনোভাবে শিথিল করা হবে না’ বলে সরকারের তরফ থেকে বারবার
বলা হলেও শিল্প কারখানা মালিকদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে রোববার থেকে
রপ্তানিমুখী কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দিন যত যাচ্ছে, রাস্তাঘাটে
মানুষও তত বাড়ছে, জীবিকার তাগিদে মানুষও আর বিধিনিষেধ মানতে চাইছে না। তবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলমান কঠোর লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়ানোর পক্ষেই মত
দিয়েছিল।
মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “১০ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর
বিধিনিষেধ বৃদ্ধি করেছি। ১১ অগাস্ট থেকে চলবে। ১১ অগাস্ট থেকে যথারীতি অফিস
খুলবে। টেস্ট কেইস হিসেবে দুয়েকদিন দেখব। প্রয়োজন হলে জরুরিভিত্তিতে বসে
সংশোধন করব। কাল আদেশ হবে, পরিবর্তন করতে হলে করব। আজ যে সিদ্ধান্ত হয়েছে
সাময়িক।”
১১ অগাস্টের পর ১৮ বছরের বেশি বয়সী কেউ টিকা ছাড়া চলাচল করলে সেটিকে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি
বলেন, “রাস্তাঘাটে, গাড়িঘোড়ায়, মোটরসাইকেল, বাইকেল, টেম্পো, বাস, ট্রেনে-
যেখানেই হোক, চলাচল করলে টিকা নেওয়া থাকতে হবে। আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি।
আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।”
গ্রামে গ্রামে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে
জানিয়ে তিনি বলেন, “কেউ বলতে পারবে না ভ্যাকসিন পাইনি। আইন না মানলে
অধ্যাদেশ জারি করে হলেও শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা বিভিন্ন লেভেলে দেওয়া হতে
পারে। যদি আবেদন-নিবেদনে কাজ না হয়। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে
কঠোর অবস্থানে যাব।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৈঠকের পর
সাংবাদিকদের বলেন, “৭ অগাস্ট থেকে সাত দিনের জন্য দেশের প্রত্যেক ইউনিয়ন,
ওয়ার্ডে প্রায় এক কোটি টিকা দেব। সেই টিকা দিতে অনেকের সহযোগিতা লাগবে।
এজন্য আজ সভা করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বাহিনী প্রধানদের কাছে সেই সাহায্য
চেয়েছি।”
গ্রামে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স্ক, অর্থাৎ ৫০ বছরের বেশি
বয়সীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “তাদের মধ্যে
মৃত্যুর হার এখন ৮০-৯০ শতাংশ। গ্রামের বয়স্করা বেশি মারা যাচ্ছেন। এজন্য
টিকা গ্রামে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের হাতে সোয়া কোটি টিকা আছে। এ মাসে আরও
প্রায় এক কোটি টিকা এসে পৌঁছাবে। টিকার কর্মসূচি বজায় থাকবে। যাদের এনআইডি
কার্ড নেই, তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেব।”
স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে
জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “চীনের সিনোফার্মের সাথে
এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানির সাথে টিকা উৎপাদন করার কার্যক্রম অনেক দুর
এগিয়ে গেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিও পেয়েছি।”
মানুষকে বিধিনিষেধ
মানানোর জন্য পুলিশকে আরও ক্ষমতা দেওয়ার যে আলোচনা ছিল, তা এখনও অব্যাহত
রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “টিকার পাশাপাশি মাস্ক পরতে হবে,
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে যদি সঠিকভাবে এনফোর্স
করতে চাই, তাহলে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে কিনা তারা
মাস্ক যারা পরবে না তাদের কিছুটা হলেও জরিমানা করতে পারে। এজন্য অধ্যাদেশ
লাগবে। আলোচনা হয়েছে, হয়ত আমরা সেদিকেও যাব।”
ইতোমধ্যে শিল্প কারখানা
খুলে দেওয়া হয়েছে এবং ধীরে ধীরে সবই খোলা হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন,
“দোকানপাটও ফেইস বাই ফেইস খুলবে। বিস্তারিত নির্দেশনা আপনারা পেয়ে যাবেন।”
সরকারের
সব শেষ হিসাবে সোমবার মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫৫ হাজারের
বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ৭৭৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা
পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে ২৩৫ জনের।
তাতে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩ জন। তাদের মধ্যে ২১ হাজার ৩৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বলেন, “হাসপাতালের ৯০ শতাংশ সিটে রোগী ভর্তি আছে। আইসিইউগুলোতে ৯৫ শতাংশ
রোগী রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি
করছি। কাজ চলছে। প্রথম দিকে ৫০০-৬০০ বেড দিতে পারব। পর্যায়ক্রমে এক হাজার
বেডে নেওয়া যাবে।”
তবে সব রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে না
মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সেসব রোগীর জন্য আলাদা হোটেল ভাড়া
করার চিন্তা করেছি, সেখানে ওষুধপত্র, ডাক্তার-নার্স থাকবে। কিছু অক্সিজেনের
ব্যবস্থা রাখব। কারণ হাসপাতালের আর জায়গা নেই। হাসপাতাল খালিও নেই। হোটেল
খুঁজছি।”