নিজস্ব
প্রতিবেদক দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২৪১ জনের মৃত্যু
হয়েছে গত এক দিনে, কেবল ঢাকা বিভাগেই মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। রোববার
সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা
বাড়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। ৪২ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করে ১০
হাজার ২৯৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ
পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৫ জন।
তাদের মধ্যে ২২ হাজার ৬৫২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।
টানা ছয়
দিন ১২ হাজারের ওপরে থাকার পর শনিবার ৮ হাজার ১৩৬ জন রোগী শনাক্তের খবর
দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা নেমে এসেছিল ৩২
হাজারের নিচে, যা শুক্রবারও ৪৮ হাজারের ওপরে ছিল। আর মৃত্যু হয়েছিল ২৬১
জনের, যা দৈনিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
সেই হিসেবে গত এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবার বেড়েছে।
তবে
নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে রোববার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৫২
শতাংশে, যা আগের দিন ২৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ ছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে
জুলাই মাসের একটি অংশ জুড়ে দৈনিক শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি ছিল।
গত
এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা
মোট সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। এই সময়ে যে ২৪১ জন মারা গেছেন,
তাদের ১০৫ জনই ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৯ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩০
জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১৬ হাজার ৬২৭ জন।
তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১২ লাখ ৫ হাজার ৪৪৭ জন। স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে সক্রিয় কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১
লাখ ২৫ হাজার ৫৯৬ জন।
লাখের উপর রোগী নিয়ে হাসপাতালগুলো বেসামাল
অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবারই সাংবাদিকদের
বলেছিলেন, এখন রোগীর সংখ্যা কমানোর বিকল্প নেই।
সংক্রমণের গতি আটকাতে
এদিনই ইউনিয়ন পর্যায়েও গণটিকাদান শুরু করেছে সরকার। বিশেষ এই কর্মসূচিতে ছয়
দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
কিন্তু ঈদের পর থেকে সারা দেশে লকডাউনের যে বিধিনিষেধ ছিল, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তুলে দেওয়া হচ্ছে ১১ অগাস্ট থেকে।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা
ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৩ লাখ
পেরিয়ে যায় গত ৪ অগাস্ট। এর মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে দিনে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০
জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮
মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৬ অগাস্ট
তা ২২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগের দিন রেকর্ড ২৬৪ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
বিশ্বে
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪২ লাখ ৮৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত
হয়েছে ২০ কোটি ২২ লাখের বেশি রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক
দিনে সারা দেশে মোট ৪২ হাজার ৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা
হয়েছে ৮১ লাখ ১৭ হাজার ৪১০টি নমুনা।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক
শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬
দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬৭ শতাংশে।
গত
এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩৫৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত
হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ১৩১ জন, কিশোরগঞ্জে ১৩১ জন, মানিকগঞ্জে
১৫৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৭৭ জন, নরসিংদীতে ১৪১ জন, রাজবাড়ীতে ১৪৪ জন এবং
টাঙ্গাইলে ১০৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে
চট্টগ্রাম জেলায় ৯৩০ জন, কক্সবাজারে ১৭৫ জন, ফেনীতে ১৪১ জন, নোয়াখালীতে ১৮৮
জন, লক্ষ্মীপুরে ১৩০ জন, চাঁদপুরে ১৩০ জন, কুমিল্লায় ৩৪৬ জন এবং
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩৯ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৯৭ জন, সিরাজগঞ্জে ১২২ জন এবং বগুড়ায় ১৭৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
অন্য
বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহে ২২৪ জন, রংপুরে ২৮০ জন, খুলনায়
১৩০ জন, কুষ্টিয়ায় ১১৪ জন, বরিশালে ১৭৭ জন, সিলেটে ২৯০ জন এবং মৌলভীবাজারে
১৮৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ১০৫ জনের
মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৫০ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া
৫৯ জনের মধ্যে ১৫ জন চট্টগ্রাম জেলার, ১১ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এবং ১০
জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া খুলনা বিভাগে ৩০ জন, রাজশাহী
বিভাগে ১২ জন, বরিশাল বিভাগে ১২ জন, সিলেট বিভাগে ৭ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন
এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ২৪১ জনের
মধ্যে ১৩১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৫৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের
মধ্যে, ২৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৭ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের
মধ্যে, ৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের
মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১০ বছরের কম ছিল।
মৃতদের মধ্যে ১২৮ জন ছিল পুরুষ,
১১৩ জন নারী। ১৮৮ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪৪ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৩ জন
বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।