নিজস্ব প্রতিবেদক: পর্যাপ্ত টিকা হাতে না আসায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আপাতত আর গণটিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানান, সারাদেশে টিকা কার্যক্রমের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টিকা হাতে এলেই আবার গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে।
রোববার দুপুরে মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী বলেন, “চায়নার সাথে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছি ছয় কোটি ভ্যাকসিনের জন্য। ইতোমধ্যে এই মাসেই ৫৪ লাখ ভ্যাকসিন আমরা পেয়েছি। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই মাসের শেষের দিকে আরও ৫০ লাখ টিকা আসবে। আমাদের স্বাভাবিক ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু থাকবে।”
মহামারীর বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে দেশজুড়ে গত ৭ অগাস্ট থেকে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করে সরকার।
গণটিকা বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা যে আমাদের আছে সেটা প্রমাণ হয়েছে। একদিনে ৩৪ লাখ ভ্যাকসিন আমরা দিয়েছি অর্থাৎ ভ্যাকসিন দেওয়ার সক্ষমতা আছে। একটা ট্রায়ালও হয়ে গেছে। এখন ভ্যকসিন প্রাপ্যতা সাপেক্ষে আমাদের আগামী দিনের কার্যক্রম চলবে।
“যদি ভ্যাকসিন থাকে অনেক, তা হলে শহরে এবং গ্রামে দুই জায়গায় এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। যদি কম থাকে তাহলে সেই ভ্যাকসিন দেওয়ার কার্যক্রম ডিজাইন করা হবে। ভ্যাকসিন পাওয়া সাপেক্ষ আমরা গ্রাম পর্যায়ে যাব, এখন আপাতত যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে।”
জাহিদ মালেক বলেন, “যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে আগামী সপ্তাহে চুক্তি হবে। রাশিয়ার সাথে আমাদের টিকা চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। এখন টিকা পেতে অপেক্ষায় আছি। ভারতের কাছে পাওনা আছে দুই কোটি ৩০ লাখ। কোনো কার্যক্রম আটকে নাই। টিকা পাওয়া সাপেক্ষে গণটিকা কার্যক্রম আবারও শুরু হবে।”
নারীদেরও টিকায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “পঞ্চাশোর্ধ যারা আছেন, তাদেরকে সবার আগে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কারণ তারাই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করছে। যত মৃত্যু ঘটছে তার নব্বই শতাংশই বয়স্ক মানুষ। নারীদেরও অনেক বেশি মৃত্যু হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই মধ্যবয়সী।”
বিধিনিষেধ নিয়ে কোভিড জাতীয় কারিগরি কমিটির সুপারিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “জাতীয় পরামর্শক কমিটি সব সময় ভালো পরামর্শ দেন। তারা জানিয়েছে লকডাউনটা আরো কিছুদিন চললে ভালো হতো। কিন্তু আমাদের আবার সবদিকেই খেয়াল করতে হয়। জীবন-জীবিকার কথা ভেবেই আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমরা এর আগেও বলেছি যে জীবিকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। এখন যেহেতু সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।”
সংক্রমণ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, “দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি কমতে শুরু করেছে। গতমাসেও আমাদের সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেক খারাপ ছিল। সংক্রমণের হার ৩২ শতাংশে উঠে গেছিল। এখন এটা কমে গিয়ে ২০ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছু কমলেও আমরা সন্তুষ্ট নই, আমরা ৫ শতাংশের নিচে সংক্রমণ চাই।”
এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।