তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটে সিলিন্ডারে অক্সিজেন
রিফিলের সময় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুণে বড় কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা না
ঘটলেও বিষ্ফোরণ আতংক ছড়িয়েছে রোগী ও স্বজনদের মাঝে। রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল
কর্মীদের সাহসী তৎপরতায় দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানায়, সেসময় ওই রিফিলিং রুমটিতে অন্তত ১০০টি বড় অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার
মজুদ। আর কিছুক্ষণ আগুণ থাকলেই হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক আকার ধারন করতো।
তবে ঘটনার সময় বিকট আওয়াজ ও হইহুল্লোড়ে আতংকিত হয়ে পরে ওই ভবনের দোতলায় এবং
তিনতলায় থাকা রোগী ও স্বজনরা। তাদের অনেকেই হুড়োহুড়ি করে নেমে যাবার
চেষ্টা করে। তবে খুব কম সময়ের মধ্যে আগুণ নিভে যাওয়ায় – বিপদ কেটে যাওয়ার
আশ^স্ত হয় তারা। তবে এসময় করোনা ইউনিটের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোগে কোন
ব্যাঘাত ঘটেনি।
তবে এই ঘটনায় অক্সিজেন রিফিল স্টেশনে দায়িত্বরত থাকা
কর্মীদের গাফিলতিকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন। তিনি জানান, দুর্ঘটনার আওয়াজ শুনে
এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আমরা ছুঁটে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি।
কিন্তু সেসময় সেখানে থাকা কর্মীরা পালিয়ে যায়। এটা কি আসলে দুর্ঘটনা - তা
এখানো জানা যায়নি। তবে করোনা ইউনিটের অক্সিজেন সংযোগে কোন সমস্যা হয়নি।
আল্লাহর রহমত যে আমরা বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি, অন্তত দুই শ’ করোনা
রোগীকে আমরা রক্ষা করতে পেরেছি।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী
পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, করোন
ইউনিটের নিচেই ভবনের ভেতরেই অক্সিজেন রিফিল ইউনিট একেবারেই অনিরাপদ এবং
অযৌক্তিক। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে অক্সিজেন রিফিলের জন্য যে পাইপগুলো
ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো গরম হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়। এছাড়া যে
সিলিন্ডারটিতে অক্সিজেন রিফিল করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা সেটি থেকে বিকট
আওয়াজের সৃষ্টি হয়। আগুণ এবং ধোঁয়া থেকে বাঁচতেই ওই রিফিল রুমটির জানালার
কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে কর্মীরা। ফায়ারর সার্ভিস এসে পুরো ঘটনার নিয়ন্ত্রন নেয়।
তিনি
আরো জানান, ‘বিষ্ফোরণ’ কি না বিষয়টি আরো ভালো ভাবে আমরা জানার চেষ্টা
করছি। আর করোনা ইউনিটের নিচতলায় এই রিফিল স্টেশনটি যে ঝুঁকিপূর্ন এবং
অযৌক্তিক তা জেলা প্রশাসককে জানানো হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা
গেছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের ডেডিকেটেড করোনা ইউনিটের নিচতলায়
আবুল খায়ের গ্রুপের তত্ত্বাবধানে অক্সিজেন রিফিলিং স্টেশনটি। এর নিচতলাতেই
করোনা জরুরী বিভাগের রোগী রাখার স্থান এবং ডিউটি ডাক্তরের কার্যালয়। ওই
বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ফ্লোরেই করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। প্রতিনিয়ত
হাসপাতালটির এই ভবনে রোগী ও রোগীর স্বজন মিলে কমপক্ষে ৫ শ মানুষ অবস্থান
করে। রিফিলিং স্টেশনের দুর্ঘটনার সময়টিও ছিলো হাসপাতালের ব্যস্তÍ সময়। ওই
ভবনের সামনেই এ্যাম্বুলেন্সে অবস্থান করছিলো রোগীরা। এছাড়া ছিলো করোনা
ইউনিটে আসা মানুষের পদচারণা। রিফিলিংয়ের সময় আগুনের সূত্রপাতে যদি অক্সিজেন
সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটতো তাহলে হতাহতের সংখ্যা বহুগুণে বাড়তে পারতো
বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
জেলা ফায়ার সার্ভিস ও
সিভিল ডিফেন্সের প্রধান মোঃ আখতারুজ্জামান শংকা প্রকাশ করে আরো জানান, আমরা
বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁেচে গেছি। আগুণ কোন সিলিন্ডারের সংস্পর্শে এসে যে বড়
বিষ্ফোরণ ঘটায়নি তা সৌভাগ্য, না হয় সে ভবনটির পরিনতি অকল্পনীয় হতে পারতো।
বিষ্ফোরণ ঘটলে কোন দেয়ালটি আস্ত থাকতো না। আর সেখানে বড় বড় অন্তত এক শ
অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার রাখা ছিলো। শুধু মাত্র সামান্য ধোঁয়া থেকেই
বাঁচতে ওই কক্ষের জানালার কাঁচগুলো ভাঙ্গতে হয়েছে। বিষ্ফোরণ না ঘটে আগুন
লাগার ঘটনা ঘটলেও নিচ তল থেকে উপর তলায় রোগীর কক্ষগুলোতেও ধোঁয়া ছড়িয়ে
হতাহত হতে পারতো অনেকে। এই ইউনিটটি করোনা ইউনিটের পেছনে আলাদা ভাবেই করা
উচিত ছিলো।
ঘটনার সময় আগুণে নেভাতে সাহায্যকরা এক এ্যাম্বুলেন্স চালক
জহিরুল ইসলাম জানান, আমরা আওয়াজ শুনেই পাশ থেকে ছুঁটে আসি। এসইে দেখি জরুরী
বিভাগের সামনে ভিড় আর ধোাঁয়। রিফিল ইউনিটের ভেতরে পাইপে আর একটা
সিলিন্ডারে আগুন জ¦লছে। ওখানে যারা ছিলো তারা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো
অনেক্ষণ। পাশ থেকে একটা লোক আগুন নেভানোর গ্যাস ব্যবহার করে ৫ মিনিটের
মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। কিন্তু ধোঁয়া সরানোর জন্য জানালার কাচগুলো
ভেঙ্গে দেয়া হয়। তবে আগুণ না নিভলে কি হতো এটা চিন্তা করতে পারছি না।
নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানে রোগীর এক স্বজন জানান, করোনা ইউনিটের নিচে এভাবে
অক্সিজেন রিফিল করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এটা তো দেখাই গেলো। আজ পরিস্থিতি কতটা
ভয়াবহ হতে পারতো সবাই অনেকটাই টের পেলো। তবুও যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত
এই ইউনিটটি সরিয়ে না নেয় তাহলে ভবিষ্যতের জন্য আরো বড় দুর্ঘটনা অপেক্ষা
করছে।
আবুল খায়ের গ্রুপের অক্সিজেন ইউনিটটিতে সেসময় কাজে থাকা এক কর্মী
সোহেল জানায়, আমরা কয়েকজন দুপুরের খাবারের জন্য বাইরে যাই, কয়েক জন ওই
রুমে ছিলো। আমরা যাবার সাথে সাথেই বিকট শব্দ পাই। যতটুকু এসে দেখেছি-
বিষ্ফোরণ ঘটেনি তবে আগুন ধরেছে। পরে আমরা সবাই মিলে সবগুলো সিলিন্ডার ওই
রুম থেকে সরিয়ে বাইরে আনি। ফায়ার সার্ভিস এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।