নিজস্ব প্রতিবেদক: এক দিনে আরও ১৮৭ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের মোট সংখ্যা ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেল। গত ১০ অগাস্ট দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মোট সংখ্যা ২২ হাজারের দুঃখজনক মাইলফলক পেরিয়ে গিয়েছিল। পাঁচ দিনে মৃতের তালিকায় যুক্ত হল আরও এক হাজার নাম। তাদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট ২৪ হাজার ১৭৫ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোবাবর সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে আরও ৬ হাজার ৬৮৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা ২৩ জুলাইয়ের পর সর্বনি¤œ।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৯০২ জন।
আগের দিন শনিবারও ৩৩ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৬ হাজার ৮৮৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছিল ১৭৮ জনের। সে হিসেবে গত এক দিনে শনাক্তের সংখ্যা আরও একটু কমলেও মৃত্যু কিছুটা বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রোববার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। এই হার আগের দিন ছিল ২০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে জুলাই মাসের বড় একটি সময় তা ৩০ শতাংশের উপরে বা আশপাশে ছিল।
সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১১ হাজার ৩৭১ জন জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত ১২ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৮ জন সুস্থ হলেন।
দেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৩০ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক মানুষ এখন নিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছেন। জুলাইয়ে এই সংখ্যা দেড় লাখও ছাড়িয়েছিল।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৩ হাজার ১৮৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে যে ১৭৮ জন মারা গেছেন, তাদের ৭১ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৩৯ জন।
দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোতে সংক্রমণ আর মৃত্যুর সংখ্যা গত মাসের চেয়ে অনেকটা কমে এসেছে। তবে মধ্য আর পূর্ব অংশে এখনও চলছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার মধ্যে শেষ ২ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১৬ দিনে।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার তা ২৪ হাজার ছাড়িয়ে গেল। এর মধ্যে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি ৬৭ লাখের বেশি রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৩৩ হাজার ১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৫২১টি নমুনা।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশে, এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর এ পর্যন্ত মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশে।
গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৪৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ২৪৬ জন, মাদারীপুরে ১০৬ জন, মুন্সীগঞ্জে ১২৫ জন, নারায়ণগঞ্জে ২৯৪ জন এবং রাজবাড়ীতে ১০০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৪৯৮ জন, নোয়াখালীতে ১৪৬ জন, কুমিল্লায় ১৬২ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৬৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
অন্য বিভাগগুলোর বিভিন্ন জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১৮৬ জন, সিলেট জেলায় ৩১১ জন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ১০১ জন, খুলনা জেলায় ১২০ জন, বরিশাল জেলায় ১৫৯ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৬ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে ১১ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১২ জন, বরিশাল বিভাগে ৮ জন, খুলনা বিভাগে ২১ জন, রংপুর বিভাগে ১৩ জন, সিলেট বিভাগে ১৩ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ১৮৭ জনের মধ্যে ১১৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৪০ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১০ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৪ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
মৃতদের মধ্যে ১০১ জন ছিল পুরুষ, ৮৬ জন নারী। ১৪১ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪২ জন বেসরকারি হাসপাতালে, ৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় এবং ১ জন হাসপাতালে নেয়ার সময় মারা যান।