তিন
দিন পর আবার দেশে সাড়ে সাত হাজারের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে; এক দিনে
মৃত্যুর সংখ্যাও গত কয়েক দিনের চেয়ে বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে,
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ৭
হাজার ৫৩৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৯৮ জন
কোভিড রোগীর। এ নিয়ে দেশে মোট ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯৬ জন কোভিড রোগী শনাক্ত
হল; আর আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হল মোট ২৪ হাজার ৫৪৭ জনের।
গত ১৩
অগাস্ট ৮ হাজার ৪৬৫ জন কোভিড রোগী শনাক্তের পরের তিন দিন শনাক্ত রোগীর
সংখ্যা সাত হাজারের নিচেই ছিল। আর ১২ অগাস্ট ২১৫ জনের মৃত্যুর পর গত চার
দিনে এত বেশি মৃত্যুও হয়নি।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬
হাজার ৯৫৯ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ১৭৪ জনের। সে
হিসেবে গত এক দিনে শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে।
মঙ্গলবার নমুনা
পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার হয়েছে ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই হার আগের দিন
২১ দশমিক ০৮ শতাংশ ছিল। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে জুলাই
মাসের বড় একটি সময় তা ছিল ৩০ শতাংশের উপরে বা আশপাশে।
গত এক দিনে শুধু
ঢাকা বিভাগেই ৪ হাজার ৩৩৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা
দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আর এই সময়ে যে ১৯৮ জন মারা গেছেন,
তাদের ৭২ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১২ হাজার ৯৫০ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত
১৩ লাখ ১৪ হাজার ৯১৬ জন সুস্থ হলেন।
দেশে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯৩
হাজার ৯৯৩ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক মানুষ এখন নিশ্চিতভাবে করোনাভাইরাস
সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছেন। জুলাইয়ে এই সংখ্যা দেড় লাখও ছাড়িয়েছিল।
বাংলাদেশে
করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। ডেল্টা
ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ
পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট। তার আগে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন
নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ
দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১৫ অগাস্ট তা ২৪
হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর
আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে
মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ২০ কোটি
৭৭ লাখের বেশি রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে
মোট ৩৯ হাজার ২৭৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮৪ লাখ
৮০ হাজার ৮১৪টি নমুনা।
নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা আগেরদিন ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ ছিল।
গত
একদিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৭৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত
হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে ১৩৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৮৬ জন, নরসিংদীতে
১৩২ জন এবং টাঙ্গাইলে ১৪৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম
বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৪৩৮ জন, কক্সবাজারে ১১৩ জন, চাঁদপুরে ২২৫ জন
এবং কুমিল্লায় ১৬৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
অন্যান্য জেলার মধ্যে খুলনায় ১২৭ জন, সিলেটে ২৬৪ জন এবং বরিশালে ১১০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে।
ঢাকা
বিভাগে গত এক দিনে যে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৯ জনই ছিলেন ঢাকা
জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৫২ জন জনের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রাম
জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৯ জন, খুলনা বিভাগে ২৬ জন,
বরিশাল বিভাগে ৭ জন, সিলেট বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন এবং ময়মনসিংহ
বিভাগে ৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ১৯৮ জনের মধ্যে ১১৭ জনের
বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৪১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৯ জনের বয়স
৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৯ জনের বয়স
২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের
মধ্যে ১১৬ জন ছিলেন পুরুষ, ৮২ জন ছিলেন নারী। ১৫১ জন সরকারি হাসপাতালে, ৪১
জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
তিনজনকে হাসপাতালে মৃত নিয়ে আসা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।