রণবীর ঘোষ কিংকর ||
কুমিল্লার
চান্দিনায় গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিঃ (জিটিসিএল) সাব-স্টেশনে
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কুমিল্লা মহানগরীসহ বেশ কয়েটি উপজেলার প্রায় ৩৫
হাজার পরিবারে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সোমবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৭টায়
চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর-বাখরাবাদ এলাকায় অবস্থিত গ্যাস ট্রান্সমিশনের
ওই সাব-স্টেশনের রেগুলেটর ভাম্বের সমস্যায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় জেলা
জুড়ে গ্যাস সংকট দেখা দেয়।
গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিঃ (জিটিসিএল)
এর দুইটি কারিগরি টিম ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এসে ওই সাব-স্টেশনে কাজ করার
পর দুপুর ২টায় গ্যাস সংযোগ চালু হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- জাতীয় গ্রীডের
গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিঃ (জিটিসিএল)
এর মাধ্যমে কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমসে প্রবেশ করে। সেখানে থেকে
আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। আর গ্যাস
ট্রান্সমিশন এর সাব-স্টেশনটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লার
চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া ইউনিয়নের কুটুম্বপুর-বাখরাবাদ এলাকায় অবস্থিত।
সোমবার
সকাল ৭টার দিকে ট্রান্সমিশন সাব-স্টেশনের রেগুলেটর ভাল্বে সমস্যা দেখা
দিলে ৩০০ পিএসআই থেকে ৪০ পিএসআই-তে নেমে আসে গ্যাস। যারফলে বাখরাবাদ গ্যাস
সিস্টেম লিঃ এর আওতায় কুমিল্লা মহানগরী, চান্দিনা, দেবীদ্বার, বুড়িচং সহ
বেশ কয়েকটি উপজেলায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এদিকে, সকাল থেকে
চুলায় গ্যাস না থাকায় বিপাকে পড়েছে অন্তত ৩৫ হাজার পরিবার। গ্রামাঞ্চলের
মানুষ মাটির চুলায় নির্ভর হলেও শহরের বাসিন্দারা পড়েছে মারাত্মক বিপাকে।
বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে শিশুদের নিয়ে। চাকুরী ও শ্রমজীবি পরিবারে দারস্থ
হয়েছেন খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্টে। আবার অনেক খাবার হোটেল রেস্টুরেন্টেও
নেই পর্যাপ্ত খাবার। গ্যাস না থাকায় তারাও পড়েছেন বিপাকে।
চান্দিনার
উপজেলা সদরের বাসিন্দা পূবালী ঘোষ জানান- সকালে রান্না ঘরে চুলায় গ্যাস না
পেয়ে পাশের ফ্লাটে খোঁজ নিয়ে। ভবনের কোন ঘরে গ্যাস না থাকায় পাশ্ববর্তী
বাসায় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে দেখি কোথাও নেই। এদিকে
বাচ্চাদের খাবার তৈরি নিয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছি। বয়স্করা পাউরুটি, চিড়া মুড়ি
খেয়ে কাটাতে পারলেও বাচ্চাদের খবর তো আর দোকানে পাওয়া যায়না। কমপক্ষে গরম
পানিও থাকতে হয়। হঠাৎ এমন সমস্যায় খুব বেশি বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।
নগরীর
বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ বেগম জানান, সকালে উঠেই দেখি গ্যাস নাই।
নাস্তা বানানোর উপায় নাই। বাসায় এমন লোকও নেই যে বাইরে থেকে নাস্তা কিনে
আনবো। অগত্যা নিজেকেই হোটেল থেকে নাস্তা কিনে এনে খেতে হবে। এভাবে না
জানিয়ে গ্যাস বন্ধ করা হলে কেন সমস্যা হলে সেটা গ্রাহকদের জানানো উচিত।
গ্রাহক তাহলে নিজেদের মতো ব্যবস্থা করতে পারে।
একই ধরনের অভিযোগ
অশোকতোলা থেকে ইভা রহমানের। তিনি বলেন, কোনও কারণে গ্যাসের সমস্যা হলে সেটা
আগে থেকে জানানো উচিত। এরপর কখন আসবে তাও জানানো হয় না। সারাদিন এক ধরনের
অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।
কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস
ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের
উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মর্তুজা রহমান খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,
কুটুম্বপুর সামিট পাওয়ার স্টেশনে গ্যাস সাপ্লাই লাইনে রেগুলেটর বাল্ব নষ্ট
হয়ে টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে কুমিল্লায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়। কুটুম্বপুর
সামিট পাওয়ার স্টেশন অফিসে জনবল সংকট রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে
লাইন মেরামত করার পর পুনরায় চালু হয়।
হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহে এই সমস্যার কারণে তিনি গ্রাহকদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন।
বাখরাবাদ
গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড এর ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিস) বাপ্পি
শাহরিয়ার জানান, এটা আমাদের সমস্যা না। বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডে
গ্যাস ঢুকে জিটিসিএল এর মাধ্যমে। জাতীয় গ্রীড থেকে জিটিসিএল এর মাধ্যমে
আমাদের ভাগ করে দেওয়া হয়। কুটুম্বপুরের সাব স্টেশন থেকে আমাদের বাখরাবাদে
যে লাইনটি যুক্ত হয়েছে ওই লাইনের রেগুলেটর সমস্যায় পুরো লাইনটি বন্ধ হয়ে
যায়। যারফলে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক বিপাকে পড়েছে। একটি একটি দুর্ঘটনা। তবে
বিজরা থেকে যে লাইনটি আমাদের এখানে যুক্ত হয়েছে সেই লাইনের আওতায় যারা আছে
তারা কোন সমস্যা হয়নি।