ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লায় হাইওয়ে হোটেল ব্যবসা
লকডাউনের ৩৩ দিনে ক্ষতি ৬০ কোটি টাকা
চাকরি হারিয়েছে ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী--
Published : Thursday, 19 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 19.08.2021 1:48:49 AM
 লকডাউনের ৩৩ দিনে ক্ষতি ৬০ কোটি টাকামাসুদ আলম।।
করোনায় লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধে কুমিল্লায় হাইওয়ে হোটেল ব্যবসায় অন্তত ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই সংকটে চাকরি হারিয়ে হারিয়েছে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের উর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে জুলাই মাসের এক তারিখ থেকে দুই দফায় ১৪ জুলাই পর্যন্ত এবং কুরবানির ঈদ উদযাপন শেষে ২৩ জুলাই ১০ আগস্ট পর্যন্ত ১৯দিনসহ মোট ৩৩দিনের কঠোর লকডাউনে হোটেল ব্যবসায় এই ক্ষতি হয়। আর্থিক সংকটে পূণরায় ঘুরে দাঁড়াতে না পারার আশঙ্কায় অনেকে হোটেল ব্যবসা ছাড়তে বসেছেন। ব্যাংক তার নীতি অনুযায়ী হোটেল ব্যবসায় ঋণ না দেওয়া ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে দারস্ত হতে পারছেন না। এদিকে দীর্ঘদিন হোটেল বন্ধে চাকরি হারালো তিন-চতুথাংশ শ্রমিক ও কর্মচারী। তাদের মধ্যে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী জাড়িয়েছেন সবজি ও হকারি ব্যবসায়।  
সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ১০৪ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে প্রায় শতাধিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে ষাটের অধিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিবহনের উপর নির্ভরশীল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কঠোর বিধিনিষেধে বন্ধ থাকা এই হোটেল ব্যবসায় দৈনিক গড়ে তিন লাখ টাকা করে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ছাঁটাই হয়েছে এই ষাট প্রাতষ্ঠানে গড়ে ৮০ জন করে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। হোটেলের চাকুরি হারিয়ে এসব শ্রমিক-কর্মচারী জীবন বাঁচাতে বেছে নিয়েছেন সবজি ও হকারি ব্যবসা। করোনার এই সংকট সময়ে হোটেল ব্যবসায়ীদের সহায়তায় ছিলেন না কেউই। সরকারের প্রণোদনা বা ব্যাংক থেকে আর্থিক কোন লোন না পেয়ে অনেক হোটেল মালিক ব্যবসা ছাড়তে বসেছেন।
কোরবানির ঈদের আগে ও পরের ৩৩ দিনের লকডাউন শেষে হলো ১০ আগস্ট। লকডাউন শিথিল হলেও ধ্বস নামা এই হোটেল ব্যবসায়ীরা খুব তাড়াতাড়ি সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে কুমিল্লায় হাইওয়ে হোটেল ব্যবসা আগের অবস্থা ফিরবে না বলে মন্তব্য করে কুমিল্লা জেলা হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি এম মুকিত টিপু। তিনি বলেন, করোনা লকডাউনের সংকট সময়ে কুমিল্লা হাইওয়ে হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েল পাশে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক হোটেল,রেস্তোরাঁ রয়েছে। গত বছরের করোনার সংক্রমণ রোধে ও লকডাউনে ব্যবসার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই চলতি বছর আবারও করোনার সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আরম্ভ হয়। ভয়াবহ এই করোনা সংক্রমণ রোধে সর্বাত্মক ও কঠোর লকডাউনে বন্ধ থাকে হোটেল ও গণপরিবহন খাত। নানা সময় নানা বিধিনিষেধ মেনে বন্ধ থাকায় হাইওয়ে হোটেলগুলোতে দৈনিক কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতির মুখে পড়া হোটেল মালিকরা কর্মরত তিন-চতুথাংশ শ্রমিক ও কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন। বাকী একাংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের কিছু সহায়তা দিয়ে রেখেছেন।
তিনি আরও জানান, দৈনিক লোকসানের উপর থাকা হাইওয়ে হোটেল মালিকদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যক্তি ব্যবসা ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। জামানত দিয়ে পরিবহণের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় ঘোষণা দিয়ে ছাড়তে পারছেন না। কারণ পরিবহন মালিকদের সঙ্গে চুক্তিতে এই হাইওয়ে হোটেল ব্যবসাগুলো চলে আসছে। লকডাউন শিথিল হলেও সংকটের ক্ষতি কাঁটিয়ে উঠতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড হাওয়ের পাশে অবস্থিত নূরজাহান হোটেলে প্রায় ৩০০ শ্রমিক কর্মচারী কাজ করতেন। করোনা লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়ায় সংেকটে ছাঁটাই হয়ে বর্তমানে মাত্র ১৫জন শ্রমিক কর্মচারী কাজ করছেন। যেখানে প্রায় ৩০০ জনের মধ্যে ২৮৫জন শ্রমিক কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। এই নূর জাহান হোটেল কুমিল্লা তথা সারা বাংলাদেশের কয়েকটি নাম করা হাইওয়ে হোটেলের মধ্যে একটি। স্বাভাবিক সময়ে এই হোটেলে দৈনিক ৪-৫ লাখ টাকা বেচা বিক্রি হয়েছে। করোনা সংকটে নূরজাহার হোটেলের এই বেচা বিক্রি একেবারে বন্ধ ছিলো।
করোনা সংকটে একই অবস্থা তৈরি হয়েছে হোটেল জমজম, হাইওয়ে ইন, কুমিল্লা হাইওয়ে ইন, ঢাকা হাইওয়ে ইন, মাতৃভান্ডার ১ ও ২, মায়ামি ১ ও ২, বিরতি, নূরমহল, তাজমহল, ময়নামতি হাইওয়ে ইন ও ব্লু ডায়মনসহ হাইওয়ের প্রায় শতাধিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ।
কুমিল্লার ব্লু ডায়মন হোটেলের মালিক মুক্তার হোসেন জানান, করোনার সংকট সময়ে তিনি হোটেল ব্যবসায় অনেক সংকটে পড়েছেন। লকডাউনে হোটেল বন্ধ থাকলেও ভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ সকল ধরণের বিল পরিষোধ করতে হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন শ্রমিক কর্মচারীর মজুরি দিলেও পড়ে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন। সংকটে তার হোটেলে কাজ করা প্রায় তিন-চতুথাংশ শ্রমিক কর্মচারীকে রাখতে পারেননি। ঈদের আগে পরে ৩৩ দিন কঠোর লকডাউনে এক দিনের জন্যেও তিনি হোটেল খোলেননি। লকযাউনগুলোত মাসিক ভাড়া ও বিল পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছেন।
করোনায় হোটেলে চাকরি হারানো মিজানুর রহমান নামে এক শ্রমিক জানান, কুমিল্লার হাইওয়ের পাশের একটি বড় হোটেলে তিনি দৈনিক মুজরিতে চাকরি করতে। কুরবানির ঈদের আগে করোনায় লকডাউন শুরু হলে হোটেলটি বন্ধ হয়ে পড়ে। দৈনিক মুজরিতে ওই হোটেলে চাকরি করায় মালিকপক্ষ চাকরিতে না যাওয়ার জন্য নিষেধ করে। পরিবারে মা-বা ও স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। করোনা সংকটে সংসার চালিয়ে নিতে ভ্যানে করে সবজি ব্যবসা শুরু করেন।
মিজানুর রহমান আরও জানান, সংকটে পড়ে তার মতো এমন আরও অনেকে আছেন চাকরি হারিয়ে সবজি ও হকারি ব্যবসা করছেন।
কুমিল্লা জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, করোনা সংকটে হোটেল ব্যবসায়ীরা যেমন কোটি টাকার ক্ষতির সম্মখিন হয়েছেন। ঠিক তেমনি দীর্ঘদিন হোটেল বন্ধ থাকায় চাকরি হারিয়েছেন তিন-চতুথাংশ শ্রমিক কর্মচারী। করোনা সংকটে এই হোটেল ব্যবসায়ীরা সরকার থেকে কোন প্রকার প্রণোদনা পাননি। ব্যাংক তাদের নীতির বাহিরে হোটেল ব্যবসায়ীদের কোন লোনও দিচ্ছেন। যার কারণে করোনা লকডাউন শেষ হলেও অনেক হোটেল ব্যবসায়ী ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, করোনায় সংকটে পড়া  হোটেল ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে হোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যদি কোন আবেদন করা হয়। তাহলে তাদের প্রণোদনা পাওয়ার বিষয়ে আমরা উপরে আলোচনা করবো।