তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে আফগানিস্তানে। বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভারতও নিজ দেশের নাগরিকদের সরিয়ে আনতে শুরু করেছে। কাবুল থেকে ফিরেছেন দুই বাঙালি তমাল ভট্টাচার্য ও স্বরজিৎ মুখোপাধ্যায়। ভারতে ফিরেই তালেবানদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এই দুই ভারতীয়।
কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে বার্তা সংস্থা এবিপি আনন্দ, জিনিউজসহ স্থানীয় গণমাধ্যমে তমাল ভট্টাচার্য তালেবানদের আফগান দখল এবং পরবর্তী গোটা পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। তারই একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তারা তালেবানদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানে দিল্লি পৌঁছান ১৬৮ জন নাগরিক।
কলকাতার নিমতার তমাল ভট্টাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘তালেবানরা সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশ তৈরি করতে চাইছে। কতটা সত্যি জানি না। সময়ই সেটা প্রমাণ করবে।’
পেশায় তমাল একজন শিক্ষক। পেশাগত কারণে কাবুলে গিয়েছিলেন মার্চ মাসে।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাবুলে কোনো যুদ্ধ হয়নি। একটা গুলিও চলেনি। খুব শান্তিপূর্ণভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে।’
তমাল বলেন, ‘বর্তমানে মোল্লা আব্দুল গনি হচ্ছেন তালেবানদের হেড। তিনি এখন ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানের আমির। তিনি ইন্ডিয়ান এবং বাকি প্রবাসী যারা সেখানে রয়েছেন তাদেরকে দ্রুত কাজে ফেরার জন্য অনুরোধ করেছেন।’
‘তিনি আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে আমরা যেন কোনো চিন্তা না করি। তিনি বলেছেন যে আমরা ৯০ দশকের তালেবানদের মতো না। তিনি চাইছেন বর্তমানে একটা নতুন দেশ তৈরি করতে।’
‘তবে আমরা জানি না তার এই প্রতিশ্রুতি কতটুকু কি সত্যি। হতে পারে এটা সম্পূর্ণ একটা আন্তর্জাতিক খেলা। সময় সেটা প্রমাণ করবে। আমার সঙ্গে যেসব ভারতীয়রা ছিলেন তারা কাবুলে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত। ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে মেকানিক পর্যায়ের লোকও আছেন।’
‘আমাদের নিরাপদভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। সঙ্গে ধন্যবাদ দিচ্ছি কিছু আফগানদেরও। আমাদের নিরাপদ যাত্রার জন্য তারা খুব একটা কাজ করেছেন।’
‘তখনকার যে সরকারের একজন পুলিশ অফিসার এসে বললো যে আপনাদের তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে তালেবানরা আসছে। তখন আমি দুই ঘণ্টার জ্যাম পেরিয়ে আমার বাড়ি পালুয়ান্দু সেখানে ফিরলাম। মিনিট ত্রিশের মধ্যেই তালেবানরা এলো এবং খোঁজ করা শুরু করলো।’
‘দেখা গেল কোনো যুদ্ধ হয়নি কাবুলে। এটি ছিল আফগানিস্তান সরকার থেকে তালেবানদের কাছে ক্ষমতার একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় স্থানান্তর। কোনো গোলাগুলি হয়নি।’
‘গোলাগুলি যা হওয়ার তা হয়েছে কাবুল বিমানবন্দরে। আমেরিকান সৈন্যরা এয়ারপোর্ট নিজেদের দখলে রেখেছিল। কারণ তাদের প্রতিনিধিদের এবং যারা দোভাষী আফগান যারা আমেরিকানদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে কাজ করেছিল, তাদের আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে নিতে চায় আমেরিকা। কারণ, আশঙ্কা রয়েছে তারা আফগানিস্তানে থাকলে তালেবানরা তাদের মেরে ফেলতে পারে।’
‘সেদিন কাবুল বিমানবন্দরে একটা গন্ডগোল সৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন আমেরিকানরাই আসলে গুলি-টুলি করে ঝামেলা করেছে। তালেবানরা কাউকে জ্বালাতন করেনি এবং তারা কোনো একটা মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি।’
‘তালেবানরা প্রথমে এসেই আমাদের বললো স্যার চিন্তা করবেন না; আমরা আপনাদের কিছুই করবো না। আপনাদের আমরা হেফাজত করবো (ওস্তাদ আপ ফিকার মাত কারো হাম কুচ নেহি কারেঙ্গে হাম আপকি হেফাজত কারেঙ্গে)।’
‘আমাদের সঙ্গে তালেবানদের বৈঠক হয়েছিল। তখন তারা বলেছিল আপনারা ভয় পাবেন না আমরা আপনাদের সঠিক নিরাপত্তা দেবো যেন কোনো থার্ড পার্টি আপনাদের মেরে ফেলতে না পারে। থার্ড পার্টি বলতে অন্যান্য টেররিস্ট পার্টিকে বোঝানো হয়েছে। কারণ তালেবানরা চাচ্ছিলেন না তাদের বদনাম হোক।’
‘ওরা আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এবং যত শিক্ষক ছিলেন সবাইকে এক জায়গায় রাখল। তারা আমাদের সঙ্গে ক্রিকেটও খেলেছিল। আমাদের তারা যথেষ্ট ভরসা যুগিয়েছে। রাতে পাহারা দিয়েছে। মেয়েদেরও সব ধরনের সাহায্য করেছে তারা।’
‘তালেবানদের সঙ্গে কোনো রকম সমস্যা আমাদের হয়নি। তারা আমদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। যদিও একটা অজানা আশঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যেও। কিন্তু তালেবানরা তাদের ব্যবহার দিয়ে আমাদের সবার সব চিন্তা বদলে দিয়েছে। আমি আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলাম তাদের আশ্বস্ত করেছি ভয় না পাওয়ার জন্য।’
‘কাবুলে কোনো সমস্যা নেই। সব দোকানপাট স্বাভাবিক চলছে। আমরা যখন আগে কাবাব খেতাম ১৫০ টাকায়। নান কাবাবে এখন মাংসের পরিমাণ ডাবল হয়ে গেছে। তালেবানদের মতে কোনো মানুষকে ঠকানো যাবে না। অনেক ধরনের আইন বদল হয়ে গেছে তাদের। ওরা ধর্মপরায়ণ মানুষ। সম্ভবত তাই তারা অনেক ভালো কাজ করেছেন বলে আমি মনে করি।’