ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
খানাখন্দে কর্দমাক্ত কোটবাড়ির দুই কি.মি. সড়কে দুর্ভোগ
Published : Tuesday, 24 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 24.08.2021 2:14:23 AM
সড়ক সংস্কার নিয়ে কুসিক ও সড়ক জনপথের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ খানাখন্দে কর্দমাক্ত কোটবাড়ির দুই কি.মি. সড়কে দুর্ভোগ মাসুদ আলম।। খানা-খন্দকে ভরা রাস্তায় সৃষ্ট গর্তে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে পড়া দুই কিলোমিটার সড়ক সংস্কার নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) এবং সড়ক জনপথের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দ্বন্দ্ব পৌঁছেছে। তাদের এই দ্বন্দ্বে বেহাল সড়ক পারাপারে নাভিশ্বাস ওঠে যাত্রী আর চালকদের। কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড সড়কের মাথা থেকে পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বার্ড পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের এই সড়কটি সংস্কার হয়নি গত তিন বছরেও।
সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের শেষ দিকে কুমিল্লার চাঁপাপুর থেকে জেলার বরুড়া পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করে সড়ক জনপথ। একই সঙ্গে কুসিক কুমিল্লা বিজিবি ক্যাম্প থেকে শুরু করে কোটবাড়ি বিশ্বরোড সড়কের মাথা পর্যন্ত সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণ শুরু করে। ২৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সওজ অধিকাংশ রাস্তার সংস্কার কাজ শেষ করে। কিন্তু কুসিকের ড্রেন নির্মাণে ধীরগতিতে বেহাল হয়ে পড়া বাকী দুই কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ শুরু করতে না পারার অভিযোগ সড়ক জনপথের।  
ড্রেনের বায়না ধরে সংস্কার কাজ বন্ধ রাখার অভিযোগ করছেন কুসিক। তাদের দাবি সড়কের বাহিরে ফুটপাত অতিক্রম করে গিয়ে কুসিক ড্রেন নির্মাণ করছেন। এতে ড্রেন সাথে সড়ক সংস্কারের কি সম্পর্ক। তাদের উচিত মানুষকে না ভোগিয়ে দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোটবাড়ি বিশ্বরোড সড়কের মাথা থেকে বার্ড পর্যন্ত সড়কটির এখন বেহালদশা। চলাচলের সম্পূর্ন অযোগ্য হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। খানা-খন্দকে ভরা রাস্তাটিতে সৃষ্ট গর্তে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে প্রায় গোটা রাস্তাটি। ফলে কুমিল্লার বিশ্ববিদ্যালয়, পল্লী উন্নয়ন বার্ড, বিজিবি ক্যাম্প, শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরসহ কুমিল্লার প্রতœতাত্ত্বিক স্থান সমূহ এবং সরকারি বেসরকারি প্রায় ৩০টির অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঘটছে প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনায়।
তিন বছরেও সড়কটি সংস্কার করতে না পারায় কুসিকের উপর দায় চাপিয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজা-ই-রাব্বি জানান, ২৩ কিলোমিটারের পুরো সড়কটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। এই সড়কের প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকী ১৫ ভাগ সড়কের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কারণে। কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ^রোডের রাস্তার মাথা থেকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) পর্যন্ত এই দুই কিলোমিটার সড়কের একটি পাশ দিয়ে সিটি কর্পোরেশন ড্রেন নির্মাণ করছেন গত দুই বছর থেকে। তারা ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে অধিকাংশ জায়গায় সড়ক কেটে ফেলেছেন। সড়ক সংস্কারের জন্য ড্রেনের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সিটি কর্পোরেশনকে যে চিঠি দিয়েছি তারও আড়াই বছর হবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। তারা যত দ্রুত ড্রেনের কাজ শেষ করবেন, তত দ্রুত আমরা সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো। ড্রেন নির্মাণে সড়কের ক্ষতি হয়। বার বার সংস্কার সম্ভব হবে না।
কোটবাড়ি চাঙ্গিনী এলাকার বাসিন্দা মো. মোশারফ হোসেন জানান, গত তিন বছর যাতন দেখছি কুসিক ড্রেন নির্মাণ করছেন। এর দোহাই দিয়ে সওজ সড়কটি সংস্কার করছেন না। খানাখন্দে সৃষ্ট গর্তে ভরা সড়কের কখনও ধুলাবালি আবার কখনও বৃষ্টির পানিতে কর্দমাক্তে দুর্ভোগ। অন্যদিকে ড্রেনের নির্মাণে মাটি খোঁড়াখুঁড়িতে ধুলায় জনজীবনে ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে। আমরা এর থেকে দ্রুত স্বস্তি চাই।
আবদুল গফুর নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, কর্দমাক্ত সড়কে পা দিতে ঘৃনা হচ্ছে। অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে বাসাবাড়ি থেকে মানুষ এই সড়কে আসছেন না। গত তিনবছর যাবত এই সড়কজুড়ে ভোগান্তি শেষ সীমায় পৌঁছেছে। দুই প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্বে আমরা আর ভোগান্তি চাই না। দ্রুত সড়কটি সংস্কার চাই।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু জানান, আমরা মানুষের ভোগান্তি ও দুর্ভোগ চাই না। দুই কিলোমিটারের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। সড়ক জনপথ ড্রেনের বায়না দেখিয়ে সংস্কার কাজ বন্ধ রেখেছেন কুসিককে দোষারোপ করার জন্য। কুসিক ড্রেন নির্মাণ করছেন সড়কের বাহিরে ফুটপাত অতিক্রম করে। সড়ক সংস্কারে ড্রেন নির্মাণের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।  
ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে আমরা কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সড়কের উপর বহুতল ভবন ও বাড়ি-ঘর নির্মাণ করেছেন। সেইগুলো সরিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে প্লান অনুসারে ড্রেন নির্মাণ করতে গিয়ে খুব বেশি সময় লেগেছে। নির্মাণ কাজটির প্রায় শেষ পর্যায়ে আছি আমরা। আগামী মাস খানেকের মধ্যে ড্রেন নির্মাণ কাজটি শেষ করতে পারবো।