তানভীর দিপু:
ডেঙ্গু
সংক্রমণের জন্য দায়ী এডিস মশার উপস্থিতি মিলেছে কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়া
বাসস্ট্যান্ড এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে। এই এলাকার বেশ কয়েকটি গ্যারেজের মেঝে
এবং বাইরে পরে থাকা পরিত্যক্ত টায়ার থেকে এই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
গতকাল সোমবারও বাসস্ট্যান্ডের ওই এলাকাগুলো থেকে আবারো লার্ভার নমুনা
সংগ্রহ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে নগরবাসীর দাবি, শুধু বাসস্ট্যান্ড
নয় নগরীর নি¤œাঞ্চল এবং জলাবদ্ধ এলাকাগুলো থেকে মশার লার্ভার নমুনা সংগ্রহ
এবং সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত মশকনিধন।
জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক
হোসাইন জানান, কুমিল্লা নগরীর সব জায়গা থেকেই ক্রমান্বয়ে নমুনা সংগ্রহ করা
হচ্ছে। যেখানেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে- সিটি কর্পোরেশনকে জানানো
হচ্ছে। তবে কুমিল্লাকে সংক্রমণ ঝুঁকিতে রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে
কুমিল্লা নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে একই সাথে মশক নিধন অভিযান জরুরী বলে মনে
করছেন সাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ। তারা বলছেন, একেকদিন একেক ওয়ার্ডে মশক
নিধনে অভিযান চালালে এর সুফল ফলপ্রসু হয় না। কারণ শুরুর দিকে যেসব এলাকায়
অভিযান চালানো হয়; পরবর্তীতে মশক নিধনে সে এলাকাগুলো পিছিয়ে পড়ে। ফলে রিস্ক
থেকেই যায়। তবে সাধারণ মানুষের পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই।
জনস্বাস্থ্যবিধ
ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরীর মতে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ নির্মাণাধীন
ভবনে ও তার আশপাশে জমে থাকা পানিতে। কারণ যে পানি স্বচ্ছ ও ¯্রােত থাকে
না, সে পানিতেই এডিস মশার জন্ম বেশি হয়। সেক্ষেত্রে নগরীর নির্মাণাধীন সকল
ভবনে প্রশাসনিক নজরদারিও প্রয়োজন। ভবন মালিকরা যদি প্রশাসনের নির্দেশনা না
মানে, ভ্রাম্যমাণ আদালতও ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
জেলা
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ মোঃ আল ইমরান মজুমদার জানান,
কুমিল্লার বাসস্ট্যান্ড এলাকাগুলোতে এডিস মশার ব্যাপক উপস্থিতি মিলেছে।
ঢাকা থেকে বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে করে এই এডিস মশা এসে থাকতে পারে। এছাড়া
নগরীর অন্যান্য জায়গাগুলো থেকেও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে
নাগরিকদের উচিত বাসা-বাড়ির পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো জলাবদ্ধ না রেখে, নিজ
দায়িত্বে ভালো ভাবে পরিচ্ছন্ন করা। এছাড়া যেখানেই এডিসের উপস্থিতি মিলছে,
সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনকারীদের জানানো হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, জমে
থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিস মশার নিরাপদ আবাসস্থল। গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার,
ফুলের টব অথবা ডাবের খোসা থেকে পানি নিষ্কাশন করা হলেও ভালো ভাবে ঘষে মেজে
পরিষ্কার করা না হলে এক বছর পর্যন্ত এডিসের লার্ভা বেঁচে থাকতে পারে বলে
জানিয়েছেন তিনি। তাই এসব জিনিসপত্র থেকে শুধু পানি ফেললেই হবে না,
সম্পূর্ণভাবে ঘষেমেজে পরিষ্কার করা লাগবে।
এদিকে শুধু বাসস্ট্যান্ড
এলাকা নয়, পুরো শহরেই গুরুত্বের ভিত্তিত্বে এডিসের উপস্থিতি নিশ্চিত করার
জন্য নমুনা পরীক্ষা ও নিয়মিত মশকনিধন কার্যক্রম চালানোর দাবী জানিয়েছেন
নাগরিকরা। এছাড়া শহরতলীর নি¤œাঞ্চলগুলোতেও স্বাস্থ্যবিভাগ ও সিটি
কর্পোরেশনের ঘনঘন পর্যবেক্ষণ দাবী করছেন তারা। ধর্মপুর এলাকার
আকতারুজ্জামান জানান, ধর্মপুর, ছায়াবিতান, শাসনগাছার আশেপাশের কয়েকটি এলাকা
দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। এছাড়া এসব এলাকাগুলোকে ঝোপঝাড়ও কম নয়।
তাই এই এলাকাগুলোতে মশক নিধনে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। রেইসকোর্স এলাকার রাব্বি
জানান, সিটি কর্পোরেশন মশকনিধনে এলেও অলিগলিগুলোতে আরো বেশি পরিমানে মশার
ঔষধ দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া সাধারণ মানুষকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে
সচেতনতা বাড়ানো উচিত।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড.
সফিকুল ইসলাম জানান, কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানির নমুনা নিয়ে এতে
এডিস মশার লার্ভা আছে কি না পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই মশা মারার
ঔষধ প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আগামী দুই মাস প্রতিরোধক প্রক্রিয়া চলমান
থাকবে।