নিজেদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ ও উপযোগী সব নির্বাচন শেষ করতে চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য মেয়াদের শেষ ছয় মাস পরিকল্পিতভাবে এগুতে চায় কেএম নূরুল হুদার কমিশন।
সোমবার (২৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত কমিশনের ৮৪তম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে ছয় মাসের নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি করতে যাচ্ছে তারা। এবিষয়ে প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা করতে ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর কমিশনের ৮৫তম সভায় এই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন, সংসদীয় দুটি আসনের উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন পদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় হয়েছে। অবশ্য করোনার কারণে ভোট অনুষ্ঠান করতে না পারায় ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচনের সময়সীমা ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে।
জানা গেছে, সবমিলিয়ে প্রায় ৪ হাজারের মতো নির্বাচনের কথা রয়েছে আগামী ছয় মাসে। অবশ্য করোনা সংক্রামণ পরিস্থিতির অবনতি হলে এই পরিকল্পনায় ছেদ ঘটতে পারে।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে তাদের ৫ বছর মেয়াদ আগামী বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। সে হিসেবে তাদের হাতে ৬ মাসেরও কম সময় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণসহ সামনে যতগুলো ভোট রয়েছে কমিশন তাদের মেয়াদের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে চায়। এজন্য কমিশন সচিবালয়কে এই বিষয়টি বিস্তারিত তথ্য দিতে বলেছে।
সূত্রে জানা গেছে, সোমবারের বৈঠকে সিলেট-৩ ও কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় পরিষদের অন্যান্য নির্বাচন ও উপনির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এসময় করোনাকালে মেয়াদোত্তীর্ণসহ বর্তমান কমিশনের মেয়াদকালে নির্বাচন উপযোগী হবে এমন সব নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে। এসময় বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনের দিকে না গিয়ে আগামী ৬ মাসের মধ্যে কখন কোন নির্বাচনগুলো করার প্রয়োজন হবে তার সুনির্দিষ্ট তালিকা দিতে ইসি সচিবালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে এই সময়ে এসএসসি, এইচএসসি, বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত এবং এসব পরীক্ষার সময়সূচি জেনে নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয় ইসি সচিবালয়কে। আর সেই অনুযায়ী ভোটের পরিকল্পনা নির্ধারণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ৬টি ধাপে এবং ওই বছর ডিসেম্বর আরেকটি ধাপে দেশের অবশিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে তিন হাজার ৯৯৮টির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে ২০৪টি ইউপির নির্বাচন গত ২১ জুন সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া তফসিল ঘোষিত ১৬৭টি ইউপি নির্বাচন করোনার কারণে স্থগিত রাখা হয়েছে। অবশ্য নির্বাচন না হওয়া ইউপির মধ্যে কিছুর আইনি জটিলতা রয়েছে।
এ ছাড়া কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাধারণ নির্বাচন, ২০টির মতো পৌরসভা নির্বাচন এবং দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদের নির্বাচিত প্রার্থীদের মৃত্যু, পদচ্যুতি, পদত্যাগজনিত কারণে স্থানীয় সরকার পরিষদের বিভিন্ন পদ শূন্য রয়েছে। এগুলোর নির্বাচনও কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায়।
সোমবারের কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে আমরা মাত্র ২০৪টিতে ভোট গ্রহণ করতে পেরেছি। আজকে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চার হাজারের মতো ইউনিয়ন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, কুমিল্লা-৭ শূন্য আসনে উপনির্বাচন, জেলা পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচন করা হবে।