ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দেবীদ্বারে শতবছরের খাল ভরাটে শত কৃষক পরিবারের আহাজারী
Published : Thursday, 26 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 26.08.2021 1:17:14 AM
দেবীদ্বারে শতবছরের খাল ভরাটে শত কৃষক পরিবারের আহাজারী এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
দেবীদ্বারে শতছরের পুরনো প্রবাহমান একটি জনগুরুত্বপূর্ণ খালের ২শত ফুট জায়গা ভরাট করার প্রতিবাদে ক্ষতিগ্রস্থ শতাধিক কৃষকের মানববন্ধন।
বুধবার দুপুরে উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কেন্দ্রীয় গোরস্থানের সামনে ওই মানব বন্ধন করেন স্থানীয় ভোক্তভূগী কৃষকরা।
মানববন্ধন চলাকালে স্থানীয় কৃষকরা জানান, বৃটিশ শাসনামলে এই এলাকার পানি নিষ্কাশন ও কৃষির উন্নয়নে খালটি খনন করা হয়েছিল। যে খালটি শাখা প্রশাখা সালদা, মরজড়া, বুড়ি, তিতাস ও গোমতী নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালের প্রথমদিকে আব্দুল্লাহপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানের প্রশস্তকরণের নামে কবরস্থান কমিটি ওই খালটির প্রায় ২শত ফুট অংশ ভরাট করেন। আমরা বাঁধা দেয়ায় কমিটির কর্মকর্তা সুবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ’র সাধারন সম্পাদক কারুজ্জামান জুয়েল, সেচ্ছা সেবক লীগ সভাপতি ইউনুছ বাহাদুর, ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ’র সাধারন সম্পাদক নাজমুল হাসান লিটন, শহীদুল ইসলাম সহ অন্যান্য সদস্যরা আশ^াস দিয়ে বলেন, ৬মাস পরেই খালটি খনন অথবা মোটা পাইপ দিয়ে পানিনিষ্কাশনের ব্যাবস্থা করা হবে। এরই মধ্যে দু’বছর অতিবাতি হয়ে গেলেও গোরস্তান কমিটির পক্ষ থেকে খাল খননের কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় কৃষিকাজে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হতে থাকে। চলতিবছর কৃষকদের নিজস্ব উদ্যোগে আব্দুল্লাহপুর সড়কের পূর্বপাশে বাঁধ দিয়ে আবাদ করায় এ বিলের ফসল কিছুটা ভালো হলেও রাস্তার পশ্চিম পাড়সহ অন্যান্য কৃষকের ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হন।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম’র স্ত্রী নার্গিস আক্তার নামে এক দরিদ্র কৃষাণী দুঃখ করে বলেন, গত ২বছরে কোন ফসল পাইনি, গত বছর আমরা স্বামী-স্ত্রী’র পরিশ্রম বাদ দিয়ে ৭ হাজার টাকা খরচ করে ৩০শতাংশ জমিতে মাত্র ৩মন ধান পেয়েছি। বড় কষ্টে আছি, ওরা প্রভাবশালী তাই আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনা, প্রতিবাদ করলে মারতে আসে, ভয় দেখায়, নানাভাবে হুমকী দেয়।
মোঃ ময়নাল হোসেন জানান, খাল ভরাটের প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র বরাবরে খালটি উদ্ধার এবং পুন:খননের আবেদন জানিয়ে একাধিকবার আবেদন পত্র দিলেও কোন প্রতিকার পাইনি। এ খালটিকে জীবন্ত গলাটিপে রাখায় এলাকার কয়েকটি গ্রাম ও বিলের বিশেষ করে শিবনগর, তাল্লুকের পাত্তর, আব্দুল্লাহপুর, ওয়াহেদপুর, কানিবিল, রামনগর, নারায়নপুরসহ কয়েকশত একর জমির ফসলে বিলের পানি আটকে থেকে ক্ষতিগ্রস্থই নয়, বেশকিছু বাড়ি-ঘরও পানির নিচে তলিয়ে যায়।
স্থানীয় কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের জানান, আব্দুল্লাহপুর কেন্দ্রীয় গণকবরটি প্রায় ৩শত বছরের পুরনো। প্রায় ১০ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ গণকবরটি ব্যাহার করা যাবে আরো ৫শত বছর। তার পরও কবর কমিটি বৃটিশ শাসনামলে এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাসন ও কৃষির উন্নয়নে খননকৃত এ খালটি ভরাট করে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে দেয়।
সুবিল ইউনয়ন সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও গোরস্তান কমিটির সদস্য ইউনুছ বাহাদূর বলেন, ঘটনাটি কয়েকবছর পূর্বের, আজকে যারা মানববন্ধন করেছেন তাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি এখনো কমিটির সদস্য আছেন, গ্রামের সম্মানীত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েই ড্রেজার মেসিন দিয়ে মাটি তুলে খালটি ভরাট করা হয়েছিল। নূরুল ইসলাম ও খলিলুর রহমান খাল ভরাটের পর পানি নিষ্কাসনের জন্য নিজ খরচে বড় বড় দু’টি কালভার্ট নির্মান করেছিলেন। সেই কালভার্ট দুটি ভেঙ্গে ভরাট সহ ওয়াহেদপুর মইধরের বাড়ি ও পীর বাড়ির মধ্যবর্তী স্থানের খালটি ভরাট করে এক ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করায় বেশ কয়েকটি গ্রামে এবং বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়ে তদন্তস্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান বলেন, তদন্তে খাল ভরাট হলে পুনঃখনন সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।