Published : Saturday, 28 August, 2021 at 12:00 AM, Update: 28.08.2021 12:45:23 AM
ইসমাইল নয়ন।। বাঁশ বেত শিল্প প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসা একটি প্রয়োজনীয় শিল্প। একসময় এই শিল্পের কারিগরদের কদর থাকলেও এই অত্যাধুনিক যুগে এসে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পে বাসা বেধেছে অবহেলা। তবু বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কিছু সংখ্যক পরিবার।
সরেজমিনে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের কয়েকটি পরিবার এই বাঁশ আর বেত শিল্পের মাধ্যমেই তাদের জীবিকানির্বাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বংশপরম্পরায় পাওয়া এই পেশাকেই আঁকড়ে ধরে আছেন তারা। এছাড়াও এই শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন উপজেলার সাহেবাবাদ গ্রামের ৪ পরিবার, রাগনগর গ্রামের ৩ শত পরিবার, ধান্যদৌল গ্রামের ২৫ পরিবার, দীর্ঘভূমি গ্রামের ৪ পরিবার ও মাধবপুর গ্রামে রয়েছে ৫০ টি পরিবার।
উপজেলার দীর্ঘভূমি গ্রামের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর শ্রী রাধা নম বলেন, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর আর তেমন নেই বললেই চলে।
এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থলি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতো, এখন এসব জিনিসপত্র প্লাস্টিকের মাধ্যমে মেশিনে তৈরী হচ্ছে। তাই আর আগের মতো আমাদের তৈরী করা জিনিসপত্রের তেমন চাহিদা নেই। কারিগররা বলছেন, এখন আর যেখানে সেখানে দেখা মেলে না বাঁশ ও বেত ঝাঁড়। তাছাড়াও প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর ওপর। বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় বেত শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। ব্রাহ্মণপাড়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি। বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগররা বলছেন, দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্প সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে চাষাবাদসহ ঘরবাড়ি তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না। কিনতে হয় চড়া দামে। তাই জিনিসপত্র তৈরী করে বিক্রিও করতে হয় চড়া দামে। অথচ স্বল্পমূল্যে এখন মানুষ প্লাস্টিক সামগ্রী পাচ্ছে।
জানা যায়, এক সময় দেশের বিস্তীর্ণ জনপদে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি হতো গৃহস্থালী ও সৌখিন পণ্যসামগ্রী। বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ থেকে বেত সংগ্রহ করে তৈরি করতেন হরেক রকমের ব্যবহারিক পণ্য। এসব নিজেদের ব্যবহারের পাশাপাশি, বাজারে বিক্রি করেও চলতো অনেক পরিবার।
তবে এখনও গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি খোল, চাটাই, খোলুই, ধামা, টোনা, পালল্টা, মোড়া,দোলনা, বুক সেল্ফ, টুরি, টুকরী, ডোল কদাচিৎ চোখে পড়ে। তবে এই বেত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে দাবী করেন তারা।