ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ডেমরায় তৈরি হত নকল ওষুধ, কুরিয়ারে যেত মফস্বলে
Published : Saturday, 4 September, 2021 at 12:00 AM
ঢাকার ডেমরায় রীতিমত কারখানা বসিয়ে কোভিড, ক্যান্সারসহ নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ বানাচ্ছিল একটি চক্র, যাদের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলছেন, ঢাকায় তৈরি করার পর এসব ওষুধ কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হত মফস্বলে। আসল-নকল বোঝা কঠিন বলে মানুষ দাম দিয়ে এসব ওষুধ কিনে প্রতারিত হত।
গ্রেপ্তাররা হলেন- তরিকুল ইসলাম, সৈয়দ আলী মামুন, সাইদুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুল লতিফ, নাজমুল ঢালী ও সাগর আহমেদ মিলন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ লালবাগ বিভাগ বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। জব্দ করা হয় দেশি ও  বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ এবং এ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নকল ওষুধ তৈরি করে আসছিল।
“এ চক্রের হোতা তরিকুল। সে তার সহযোগী মামুন এবং সাইদুলকে নিয়ে ঢাকার ডেমরায় কারখানা বসিয়ে ডায়াস, মেশিন, কেমিকেল ও কাঁচামাল সংগ্রহ করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ঔষধ তৈরি করছিল।”
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ চক্রের সদস্য মনোয়ার ও লতিফ ট্যাবলেট তৈরির ফয়েল পেপার এবং ওষুধ রাখার সিলিন্ডার সরবরাহ করতেন।
আর নাজমুল তার ফকিরাপুলে তার মালিকানাধীন 'সানাজানা প্রিন্টিং প্রেস' থেকে বিভিন্ন ওষধের প্যাকেজিং, কাটিং এবং পেস্টিংয়ের কাজ করতেন।
উৎপাদিত এসব নকল ও ভেজাল ওষধ মাখন ও জাকির নামে আরও দুজনের হাত ঘুরে মিলনের মাধ্যমে মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় ইমরানের কাছে যেত। ইমরানের দায়িত্ব ছিল সেগুলো বাজারজাত করা।
ওষুধগুলো সেখান থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হত বলে জানান হাফিজ আক্তার।
এই চক্রের সদস্য মাখন ও জাকিরের নাম পুলিশ জানতে পারলেও এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে নকল ওষধের কারখানা থেকে রোস্টার মেশিন, ড্রায়ার, দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ ঔষধ, ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ, কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ জব্দ করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতিটি ওষুধে দুই ধরনের উপাদান থাকে, সক্রিয় উপাদান আর নিষ্ক্রিয় উপাদান। রোগ সারানোর জন্য কী পরিমাণ সক্রিয় উপাদান কোন ওষুধে থাকবে, তা ওষুধের গায়ে লেখা থাকে।
“একটা মোনাস-১০ ট্যাবলেটে সক্রিয় উপাদান হিসেবে মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম থাকে ১০ মিলিগ্রাম। কিন্তু ওষুধ হিসেবে আকার দেওয়ার জন্য মন্টিলুকাস্ট সোডিয়ামের সঙ্গে স্টার্চ, ল্যাকটোজের মত বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় উপাদান যোগ করা হয়।”
তিনি বলেন, “মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম ব্যবহার না করেই শুধু স্টার্চ বা অন্যান্য উপকরণ দিয়ে এমন ট্যাবলেট তৈরি করা যায়, যা দেখলে মনে হবে হুবহু মোনাস-১০ ট্যাবলেট। কিন্তু ওষুধে নির্ধারিত মাত্রায় সক্রিয় উপাদান না থাকলে তাকে ওষুধ বলা যাবে না।”
লালবাগ বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, “নকল আর আসল ওষুধ চিনতে খুবই সমস্যা হয়। তবে আসল ও নকল ওষুধের প্যাকেটের রঙে কিছুটা পার্থক্য থেকেই যায়। আর নকল ওষুধ সহজে ভাঙা যায়। আসল ওষুধ চাপ দিলে অত সহজে ভাঙে না।”