দরকারি সব পণ্যের দাম চড়া
Published : Saturday, 4 September, 2021 at 12:00 AM
বেঁচে থাকার জন্য যেসব পণ্য বেশি দরকার, সেসব পণ্যের দামই বেড়েছে। অর্থাৎ চালের দাম আবারও বেড়েছে। বেড়েছে আটা-ময়দার দামও। দাম বাড়ার প্রবণতা থেকে বাদ পড়েনি চিনিও। শুধু তা-ই নয়, ডালের দামও বেড়েছে। বাড়ার তালিকায় রয়েছে ডিম ও মুরগির দাম। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এসব পণ্যের দাম নতুন করে বেড়েছে। এ ছাড়া সবজি, মাছ, আলু, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দামও বাড়তি। নাগালের বাইরে রয়েছে মাংসের দাম। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষ। দরকারি এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা জমানো সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মানিকনগর এলাকার গোলাম কিবরিয়া কামাল বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের অভাব নেই। কিন্তু দাম চড়া। তার মতে, বেঁচে থাকার জন্য যেসব পণ্য বেশি দরকারি, সেসব পণ্যের দামই বেড়েছে। এদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনও কারণ ছাড়াই জিনিসপত্রের দাম এখন বাড়তি। তারা বলছেন, সবকিছু খুলে দেওয়ার পর স্কুল-কলেজও খুলে দেওয়ার কথা হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীতে মানুষ বাড়ছে। ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
বাজারের চিত্র বলছে, সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। তবে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় শুধু মাঝারি পাইজাম ও লতা চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোটা চালের (স্বর্ণা, চায়না) দামও এখন ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি। আর মাঝারি ধরনের পাইজাম ও লতা চালের দাম এখন ৫৮ টাকা কেজি। এই চাল গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিক্রি হয়েছে ৫৬ টাকা কেজি দরে।
চালের খুচরা বাজারে মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫, আটাশ ৫০ থেকে ৫৫, স্বর্ণা ৪৭ থেকে ৫০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে খোলা আটার দাম বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। গত এক মাসে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। একইভাবে গত এক সপ্তাহে প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। এই পণ্য গত এক মাসে বেড়েছে ৩ শতাংশ। বাজারে এখন খোলা আটার দাম ৩৩ টাকা কেজি। এক মাস আগে এই পণ্যটির দাম ছিল ২৮ টাকা কেজি।
এদিকে দাম বেড়েছে চিনিরও। ৬০ টাকা কেজি চিনি এখন ৮০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। গত এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ এবং গত এক বছরে ২৭ শতাংশ।
মসুর ডালের (বড় দানা) দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি, ছোট দানার দাম ৯৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা। গত এক সপ্তাহে বড় দানা মসুরের দাম বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক বছরে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশের মতো। আর ছোট দানার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ।
গত এক মাসে ডিমের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৩০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি এখন ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দেশি হলুদের কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে হলুদের কেজি ১৪০ টাকা ছিল, সেটি শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে দেশি হলুদের দাম কেজিতে বেড়েছে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ। অবশ্য আগের দুই সপ্তাহে এই হলুদের দাম বেড়েছিল কেজিতে ৭০ টাকার মতো। গত বছরের এই সময়ে দেশি হলুদের দাম ছিল ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। এখন সেই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের এই সময়ে আমদানি করা রসুনের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। সেই রসুনের দাম এখন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি। এ ছাড়া ২০২০ সালের এই সময়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় এক লিটার খোলা পামওয়েল পাওয়া যেতো। এখন সেই পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৬ টাকা দরে। একইভাবে গত বছরে যে পাম অয়েলের (সুপার) দাম ছিল ৭১ থেকে ৭৫ টাকা, সেই পামওয়েল এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৬ টাকা থেকে ১২০ টাকা লিটার দরে। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা।
বাজারে ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ছিল একই। এদিকে কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে শীতের আগাম সবজি শিম ও ফুলকপি বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে দাম চড়া। শিম কিনতে কেজিতে ১৬০-২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর ছোট একটা ফুলকপি কিনতে লাগছে ৩০-৫০ টাকা। টমেটো ও গাজর কিনতে কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে গুনতে হচ্ছে। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচকলার হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়সের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তবে ছোট এক আঁটি লালশাকের জন্য ক্রেতাকে ২০ থেকে ৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে। মুলাশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা আঁটি, আর কলমি শাক ৫ থেকে ১০ টাকা আঁটি।
বাজারে রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকা, মৃগেল মাছের কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাক, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা আর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। বাজারে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশেরও দেখা মিলছে। তবে দাম এখনও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বড় (এক কেজির বেশি) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১৩০০ টাকা, মাঝারি আকারের ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আর ছোট আকারের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।