মাসুদ
আলম।। দক্ষিণগ্রাম বিলে বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্মফুল নিয়ে শুরু হওয়া
গবেষণায় যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কো।
শুধু বিরল প্রজাতির হলুদ পদ্মফুল নয়, এই বিলে ফোটা গোলাপি, সাদা ও হদুলসহ
তিন রঙের পদ্মফুল নিয়েই গবেষণা শুরু করে রাজধানীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা
বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
ইউনেস্কোর অর্থায়নে গবেষণা পরিচালনা করছে এই প্রতিষ্ঠান। এছাড়া কুমিল্লার
বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ের ওই দক্ষিণগ্রামের পদ্ম বিলের ঐতিহ্য রক্ষা,
গবেষণার পাশাপাশি জলাভূমি ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায়ও কাজ করবে বেঙ্গল
প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে এই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি।
ইতিমধ্যে
প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণগ্রাম জলাশয়ের কিনারায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এই
সময়ে সেখানে নৌকা নিয়ে কেউ পদ্মফুল ছিঁড়তে পারবে না। জলাশয়ে গিয়ে মাছও আহরণ
করতে পারবে না। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। এ ধরনের
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে কুমিল্লার পরিবেশবাদী সংগঠন ও পরিবেশবিদেরা।
গত
(২৫ আগস্ট) মঙ্গলবার কর্মসূচির মাঠ পর্যায়ের কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা
হয় বিশ্বের নতুন প্রজাতির হলুদ পদ্মের সন্ধান পাওয়া কুমিল্লার বুড়িচং
উপজেলার দক্ষিণগ্রাম বিলে। এদিন দক্ষিণগ্রাম বিল পরিদর্শনের পাশাপাশি
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের হাতে প্রচারমূলক পোস্টার
তুলে দেওয়া হয়।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার, বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ
অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও পদ্ম গবেষক সিকদার আবুল কাশেম
শামসুদ্দীন, বুড়িচংয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন, রাজাপুর
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।
সূত্রে জানা যায়, বেঙ্গল
প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সাল থেকে
বাংলাদেশে পদ্মফুলের বৈচিত্র্য, গুণাগুণ ও সংরক্ষণ দিয়ে গবেষণা করে আসছে।
গবেষণা করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি বিলে পদ্মফুলের সন্ধান পায়
তারা। এরই মধ্যে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের দক্ষিণগ্রাম জলাশয়েই হলুদসহ তিন ধরনের
পদ্মফুলের সন্ধান মিলেছে। ওই কারণে এখানে গবেষণা করার জন্য ২০১৯ সালেই
ইউনেস্কোতে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চলতি বছরে ওই গবেষণা কাজ করার
জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয় ইউনেস্কো। আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের
গবেষণার কাজ চলবে।
এদিকে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণগ্রাম
এলাকার অন্তত ১০ একর জায়গা নিয়ে বিস্তীর্ণ জলাশয়ে পদ্মফুল ফুটে আছে।
প্রকৃতির আপন খেয়ালে ওই জলাশয়ে এই ফুলের জন্ম। অন্যবারের তুলনায় এবার কম
ফুল ফুটেছে। পদ্মফুল বেড়ে উঠছে, আর দখিনা বাতাসের সঙ্গে দোল খাচ্ছে পুরো
জলাশয়ে। পদ্মফুলের ওপর ওড়াউড়ি করছে নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী।
বুড়িচং
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অপরূপ এই পদ্মবিল শুধু
বুড়িচং বা কুমিল্লার নয়, সারাদেশের গৌরব। কাজেই এই বিল এবং বিলের হলুদ পদ্ম
রক্ষায় আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করব।
কর্মসূচি সফল করতে সব রকম সহযোগিতার
আশ্বাস দিয়ে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, এখানে
'হলুদ পদ্ম' রয়েছে, এটি পদ্মের সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি হিসেবে বিবেচিত
হতে চলেছে। তাই এই পদ্মের গবেষণা ও সংরক্ষণে সবারই এগিয়ে আসা উচিত।
তিনি
বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায়
এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পদ্ম রক্ষার পাশাপাশি কর্মসূচিটি জলাশয়ে
দেশীয় প্রজাতির মাছসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকেও রক্ষা
করবে।
বেঙ্গল প্ল্যান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী
পরিচালক সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দীন বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে দক্ষিণগ্রাম
পদ্মবিলে গবেষণা করার তাগিদ অনুভব করি। এরপর ইউনেস্কোতে প্রস্তাব দিই। ওরা
সাড়া দেয়। এখন গবেষণা শুরু হয়েছে। পদ্ম গাছ আমাদের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম
বড় উপাদান। তাই যেসব জলাশয়ে এখনও পদ্ম আছে, সেগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা
হলে গোটা জলাশয়ের অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ ও ক্ষুদ্র প্রাণীদেরও সংরক্ষণ করা
যাবে।
কর্মসূচিটি বাস্তবায়িত হলে মানুষ পদ্মকে নতুনভাবে চিনবে উল্লেখ
করে প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্ত অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার বলেন, আমরা
না বুঝে অনেক পদ্মবিল এরই মধ্যে নষ্ট করে ফেলেছি। এই সমীক্ষা প্রাণ-প্রকৃতি
রক্ষায় যেমন সহযোগিতা করবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও অবদান রাখবে।
তিনি
বলেন, পদ্মফুলের আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশ,
ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ। কুমিল্লার
বুড়িচংয়ের জলাশয়ের পদ্মফুল আমরা সংরক্ষণ করে বীজ নিতে চাই। এখানে হলুদ
পদ্মফুল ফোটে। এটি সচরাচর অন্য কোনো বিলে মেলে না। এক জলাশয়ে তিন ধরনের
পদ্মফুল পাওয়াও কঠিন।