ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
মাদকের আগ্রাসন উৎসে হাত দিন
Published : Sunday, 5 September, 2021 at 12:00 AM
মাদকের আগ্রাসন উৎসে হাত দিনদেশে মাদক যেভাবে অবাধে প্রবেশ করছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইয়াবা, ফেনসিডিল ছাড়াও দেশে নতুন মাদক হিসেবে আইস ও এলএসডির বিস্তার ঘটছে। করোনাকালেও নানা কৌশলে মাদক সীমান্ত থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে। আমরা বিস্মিত, দেশে এভাবে মাদকের রমরমা কারবার চললেও, ঝিমিয়ে পড়েছে মাদকবিরোধী অভিযান। সা¤প্রতিক সময়ে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মতো মাদক জব্দ ও মামলা যেমন কমেছে, তেমনি কমছে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা।
আমরা জানি, মাদকাসক্তি আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা। যে কোনোভাবেই হোক এর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। মাদক নির্মূলে সরকারের অধিদপ্তর রয়েছে, আইন আছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রুটিন তৎপরতার পরও কোনোভাবেই মাদক নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ২০১৮ সালে সরকারের বহুল আলোচিত বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযানের পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি ঘটেনি। করোনা দুর্যোগের এ সময়ে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে ভাটা পড়ায় পরিস্থিতি ভাবনার চেয়েও নাজুক হয়ে পড়েছে। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ-তরুণী যেমন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এ ব্যাধি। মাদকের মধ্যে ইয়াবার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে এক সময় নাফ নদ দিয়ে ইয়াবার বেশি চালান এলেও এখন রুট বদলে সমুদ্রপথ ও পার্বত্য এলাকা হয়ে অধিকাংশ চালান ঢুকছে।
সারাদেশে তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। আমরা মনে করি- জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা পর্যায়ের অসাধুদের সম্পৃক্ত থাকা ছাড়া এভাবে অবাধে মাদকবাণিজ্য করা সম্ভব নয়। এ কারণেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন অভিযানে বাহকসহ ছোট কারবারি ধরা পড়লেও অর্থ বিনিয়োগকারী ও রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, উত্তরার সুরক্ষিত বাসাবাড়িতে মাদকের কারখানা রয়েছে। এর আগে ঢাকা মহানগর ডিবি একাধিক অভিযানে চলন্ত পথে ইয়াবা তৈরির সরঞ্জাম, রাসায়নিক দ্রব্যাদিসহ কয়েক ব্যক্তিকে আটক করতে সক্ষম হয়। গোয়েন্দারা কোনো কারখানার অবস্থান শনাক্ত করতে পারছে না কেন? আমরা চাই, মাদক মোকাবিলায় সবার আগে এর সঙ্গে জড়িতদের অর্থনৈতিক চেইন ভেঙে দেওয়া হোক। তা না হলে অভিযান চালিয়েও মাদক নির্মূল করা কষ্টসাধ্য হবে। তবে নিয়মিত মাদক অভিযান কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। মিয়ানমার থেকে বার্মিজ কাপড়, আচার, কাঠ ও পেঁয়াজের সঙ্গেও ইয়াবা যাতে না আসে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দৃষ্টি দিতে হবে উৎসে। সর্বাবস্থায় আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোকে সতর্ক থাকতেই হবে। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে ঢোকার কথা নয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, চলমান পরিস্থিতিতে নতুন কৌশলে মাদকবিরোধী অভিযান কীভাবে আরও জোরালোভাবে শুরু করা যায়, এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আমরা মনে করি, সব দিক বিবেচনায় নিয়েই প্রশাসনকে করণীয় ঠিক করতে হবে। বিশেষ করে, সা¤প্রতিক সময়ে মাদক কারবারে অনলাইনকেন্দ্রিক প্রযুক্তির বিষয়টিও জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ চ্যালেঞ্জও মোকাবিলায় সক্ষমতা থাকতে হবে।