
করোনা অতিমারীর
ক্রান্তিকালে একদিকে যেমন প্রায় সব রকম ওষুধের চাহিদা ও দাম বেড়েছে,
অন্যদিকে এই সুযোগে নকল ও ভেজাল ওষুধে সয়লাব হয়েছে বাজার। অর্থাৎ, ওষুধের
দোকান ও ফার্মেসিগুলো। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির এই কুচক্রটি মূলত দেশের
সর্ববৃহৎ ওষুধের মার্কেট বলে পরিচিত মিটফোর্ডকেন্দ্রিক। গত বুধবার এই
চক্রের সাত জনকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে
এলিটফোর্স র্যাব। সরেজমিন কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে যে, এরা শুধু করোনা
নিরাময়ের ওষুধ নয়, এমনকি হন্তারক ব্যাধি ক্যান্সার ও হাঁপানির ওষুধও তৈরি
করে নামী-দামী কোম্পানির মোড়কে বাজারজাত করছে। এসব কোম্পানির সঙ্গে জড়িতদের
বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের অনিবার্য দাবি।
করোনাকালে
ওষুধের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ দিন দিন দুর্লভ ও
দুর্মূল্য হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ভিটামিন, কাশি, জ্বর,
ক্যালসিয়াম ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের। ইতোমধ্যে কয়েকটি নামী-দামী কোম্পানির
দুই শতাধিক ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। এক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির
ঘটনা ঘটেছে ১০ থেকে প্রায় ৩শ’ শতাংশ পর্যন্ত। এ অভিযোগ পাইকারি ও খুচরা
বিক্রেতাদের। তাদের মতে, দাম বাড়ানোর আগে বাজারে ওষুধ সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে
কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই
জিম্মি হয়ে পড়ে তাদের নিকট।
বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে
কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধশিল্প তার অন্যতম। অভ্যন্তরীণ
চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ তৈরি হয় দেশেই। বিশ্বের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশে
তৈরি ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, কয়েকটি নামী-দামী ওষুধ
কোম্পানির পাশাপাশি কিছু অখ্যাত কোম্পাানিও আছে, যারা তৈরি করছে নকল ও
ভেজাল ওষুধ। ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুসহ বয়স্কদের মৃত্যুর অভিযোগও আছে।
অভিযুক্ত কোম্পানির মালিকদের জেল-জরিমানাসহ কারখানাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দুঃখজনক হলো, এর পরও মানহীন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি
কোম্পানির বিরুদ্ধে। মূলত এসব হয়েছে ওষুধের দাম বাড়ার কারণেই।
ওষুধশিল্প
একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত
ওতপ্রোতভাবে। খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন
মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে; অনুরূপ ভেজাল ও নকল-মানহীন
ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবনকে। আর তাই ওষুধের মান ও দাম নিয়ে
হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে
ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। এক্ষেত্রে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ একটি আদর্শ
উদাহরণ। বাংলাদেশেও অনুরূপ আদলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারি সংস্থা গঠন
করা যেতে পারে, যারা সর্বদাই ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট
থাকবে।