সরকারি
হাসপাতাল, বিআরটিএ ও পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের
সেবাপ্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি
হাসপাতালগুলোতে একটি প্রতারকচক্র সব সময় সক্রিয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের
সামনে এদের ভিড় করে থাকতে দেখা যায়। এই দালাল ও প্রতারকচক্রের কাছে সাধারণ
রোগীরা তো বটেই; হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীরাও যেন অনেক ক্ষেত্রে অসহায়।
বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের হয়ে কাজ করা এসব দালাল রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যেতে
পারলে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেয়ে থাকে। এর বাইরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে
রোগী দেখানোর সুযোগ করে দেওয়ার নামেও এরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা
হাতিয়ে নেয়। রাজধানীর বাইরেও সরকারি হাসপাতালে দালালচক্র সক্রিয়। এই
দালালচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাব। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ
আদালতে অভিযানে আটক হওয়া দালালচক্রের প্রায় ৫০০ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে
কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। ৬৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেটরা ২৪৮ জন দালালকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এ ছাড়া ২৪৯ জন
দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন।
সেবা প্রতিষ্ঠানে দালালদের
দৌরাত্ম্য নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে হাসপাতালের বহির্বিভাগে যেমন দালালচক্র
সক্রিয়, তেমনি জেলায় জেলায় পাসপোর্ট অফিস ও বিআরটিএ অফিসে দালালদের দেখা
পাওয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই দালালচক্রের সঙ্গে এসব অফিসে কর্মরত
কিছু মানুষেরও যোগসাজশ আছে। দালালদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই এসব সরকারি অফিসে
সাধারণ মানুষের সেবাপ্রাপ্তি কঠিন করে তোলা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়
দালাল না ধরলে কোনো কাজ হয় না। পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ হলেও
একেবারে সাধারণ মানুষের জন্য খুব সহজ নয়। পাসপোর্ট করতে গেলে ফরম পূরণ,
ব্যাংকে ফি জমা দেওয়া, ফরম জমা দেওয়া ইত্যাদি নানা কাজ করতে হয়। এসব কাজ
করার সময় কোনো না কোনো মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হতেও পারে। এই কাজটি কী
করে আরো সহজ করা যায় সেটা ভাবতে হবে। বিআরটিএর কাজগুলো সাধারণের জন্য কঠিন
না করে সহজ করে তুলতে হবে। তবে সরকারি হাসপাতালের অঙ্গন অবশ্যই বেসরকারি
হাসপাতাল ও ক্লিনিকের দালালদের থেকে মুক্ত রাখা দরকার।
সব সেবা
প্রতিষ্ঠানেই অভিযান পরিচালনা করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে মানুষের
সেবাপ্রাপ্তি। সেই সঙ্গে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে।