করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত না হয়েও করোনার বলি হচ্ছে এ দেশের বহু কন্যাশিশু। ভাগ্যবিড়ম্বিত
এসব শিশুকে শৈশব পেরোনোর আগেই জোর করে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে।
গ্রামাঞ্চলে এখন ১০-১২ বছরের মেয়েদেরও বিয়ের ধুম লেগে গেছে। প্রকাশিত একটি
খবরে জানা যায়, বাগেরহাটের শুধু একটি উপজেলায়ই করোনার এই সময়ে ছয় শতাধিক
কন্যাশিশুর বিয়ে হয়ে গেছে। উপজেলাটির নাম শরণখোলা। যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের
প্রায় সবাই স্কুলে যেত। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির মধ্যে তারা পড়াশোনা করত।
অন্য একটি খবরেও প্রায় একই ধরনের তথ্য এসেছে; কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে অবস্থিত
সারডোব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের। স্কুলটির নবম শ্রেণির একমাত্র নার্গিস
নাহার নিজের বিয়ে ঠেকাতে পেরেছে। এ জন্য তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে,
অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। করোনার এই সময়ে তার আট সহপাঠিনীর সবারই বিয়ে হয়ে
গেছে। একই অবস্থা দশম শ্রেণিতেও। চার ছাত্রীর তিনজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। এই
চিত্র কমবেশি সারা দেশেরই। তার অর্থ বাল্যবিয়েবিরোধী আইন বা শাস্তি যেমন
কাজে আসছে না, তেমনি এসংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণাও বাল্যবিয়ে থেকে অভিভাবক ও
সমাজপ্রধানদের ঠেকাতে পারছে না। তাহলে এই সর্বনাশা কুপ্রথা রোধের উপায় কী?
প্রকাশিত
খবর থেকে জানা যায়, শুধু হাই স্কুল নয়, প্রাইমারি স্কুলের অনেক
কন্যাশিশুরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অথচ এদের অনেকেই লেখাপড়ায় যথেষ্ট ভালো ছিল।
একটু যত্ন পেলে এদের অনেকেই ভালো ফল করতে পারত বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের
শিক্ষকরা। এই যে এভাবে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া, তা কি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি?
এটি কি রাষ্ট্রীয় ক্ষতি নয়? প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরণখোলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে
অবস্থিত একটি বিদ্যালয়ের নাম দক্ষিণ খুড়িয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমি আক্তার। ক্লাসে ৩৫ জন
ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে তার রোল নম্বর ছিল ৪। তার বাবা মাছ ধরে সংসার চালান।
অভাবের সংসারে থাকা সুমির বিয়ে হয়ে গেছে। থেমে গেছে তার জীবনের স্বপ্ন।
অপমৃত্যু হয়েছে একটি সম্ভাবনার। সারা দেশে প্রতিনিয়ত এ রকম কত হাজার হাজার
সুমির স্বপ্নের, সম্ভাবনার অপমৃত্যু হচ্ছে তার খবর কি আমরা রাখি? বেসরকারি
সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
থাকায় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে ১৩ শতাংশের মতো। আর গত ২৫ বছরের মধ্যে এ সময়ে
বাল্যবিয়ের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাহলে স্থানীয় প্রশাসন এই সময়ে
বাল্যবিয়ে রোধে কী ভূমিকা রেখেছে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু আইন করে
কিংবা শাস্তি দিয়ে বাল্যবিয়ে রোধ করা যাবে না। বাল্যবিয়ের সঠিক কারণগুলো
অনুসন্ধান করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে
আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের
সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।