সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এক-তৃতীয়াংশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অবশ্য স্বতন্ত্র হলেও প্রার্থীদের বেশিরভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগ ঘরানার। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তারা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার প্রথম দফার স্থগিত ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও একক প্রার্থী থাকায় এসব ইউপির ৪৩টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি। এসব ইউপিতে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে সোমবারের ভোটে চেয়ারম্যান পদে ১১৭টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ১১৭টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৭৬টিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন ৩৬টি ইউপিতে। এর বাইরে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী একটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তালা উপজেলার ঘষিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদে ওয়ার্কাস পার্টির মোল্লা সাবির হোসেন বিজয়ী হয়েছেন। ইউপিতে তার নিকটবর্তী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মোজাফফর রহমান।
একটি করে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকায় চারটি ইউপির ফলাফল স্থগিত রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগ ও তিনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ৬টি ইউপির মধ্যে পাঁচটিতে ব্যালট এবং একটিতে ইভিএম ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যালটে অনুষ্ঠিত পাঁচটি ইউপির সবগুলোতেই স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছেন। অপরদিকে ব্যালটে অনুষ্ঠিত বারাকপুর ইউপিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী।
বাগেরহাট জেলার ২৭টি ইউপির মধ্যে ২৬টিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এ জেলার কেবল মোরেলগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। বাগেরহাট জেলার ৩৯টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- সাতক্ষীরা জেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তুলনামূলকভাবে বেশি বিজয়ী হয়েছে। এ জেলার মোট ২১টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১১টি ইউপির চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৯টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছে। এ জেলার একটি ইউপিতে ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী জিতেছেন।
ইভিএমে ভোটের হার বেশি:
ইউপি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটের হার কাগজে ব্যালটের তুলনায় কিছুটা বেশি পড়েছে। সচরাচর নির্বাচনে কাগজে ব্যালটে ভোটের হার বেশি ওপরে থাকলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে। সোমবার ইউপি নির্বাচনে গড় ভোটের হার ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। মোট ২০ লাখ ৯৩ হাজার ১১৭টি ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০টি।
নির্বাচনে ব্যালটে ভোটের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। এক্ষেত্রে ১৯ লাখ ৩০ হাজার ১৩ টি ভোটের মধ্যে পড়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৫টি ভোট।
আটটি ইউপিতে ইভিএমে ভোট হয়। ইভিএম-এর ভোট ছিল ৬৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৭৯টি ভোটের মধ্যে ইভিএমে পড়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৭২৫টি।
সর্বোচ্চ ৮৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ভোট পড়েছে খুলনার দাকোপ উপজেলার দাকোপ ইউনিয়ন পরিষদে। ইউপিতে মোট ৬ হাজার ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫ হাজার ৩৫০টি। ইউপিতে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর ইউপিতে। এখানে ভোট পড়েছে ৪৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এখানে ৩১ হাজার ৪০১টি ভোটের মধ্যে কাষ্ট হয়েছে ১৩ হাজার ৭৪০টি। ইউপিতে আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।