ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
লগ্নি ও লাগাম দুই-ই থাকুক ই-কমার্সে
Published : Sunday, 26 September, 2021 at 12:00 AM
লগ্নি ও লাগাম দুই-ই থাকুক ই-কমার্সেদেশের ই-কমার্সে বিরাজমান অস্থিরতা স্বাভাবিকভাবেই জনমনে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। শুক্রবার জাতীয় দৈনিকের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনও অন্তত দশটি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাশপের বাইরে এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি।
প্রকশিত প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা ক্রেতা ও সরবরাহকারীর টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। ভবিষ্যতে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা ও পণ্য সরবরাহকারীর পাওনা অপরিশোধিত থেকে যাবে এবং ভবিষ্যতে আরও প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। এ অবস্থায় আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। ব্যবস্থা গ্রহণ মানে সংশ্নিষ্টদের গ্রেপ্তার করা শুধু নয়, তাদের দ্রুত বিচার করা জরুরি। সম্প্রতি উচ্চ আদালত যথার্থই মন্তব্য করেছেন- ডেসটিনি, ই-অরেঞ্জ, ইভ্যালি ও এহসান গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করে গ্রাহক নিঃস্ব হওয়ার পরই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা মনে করি, গ্রাহকের অর্থ কীভাবে ফেরত দেওয়া যায়, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আমরা দেখেছি, ই-কমার্স নিয়ে গত কয়েক দিনে দায়িত্বশীল পর্যায়ে বেশ আলোচনা হয়েছে।
সমকালের প্রতিবেদন অনুসারে, বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় সাম্প্রতিক সমস্যা বিষয়ে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কীভাবে এখান থেকে গ্রাহকদের পাওনা পণ্য ও টাকা বের করা যাবে সেজন্য তাদের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ এসেছে সভায়। আমরা মনে করি, সদিচ্ছা থাকলে, গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়া সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ই-কমার্সের বর্তমান অবস্থায় যে কোনোভাবেই হোক এটি নিশ্চিত করতেই হবে। কারণ ই-কমার্সে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো গ্রাহকের আস্থা। এটি রক্ষা করা না গেলে, দু-একটি প্রতিষ্ঠান নয়, গোটা শিল্পের ওপরই মানুষ আস্থা হারাবে। ইতোপূর্বে এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছি, গ্রাহকের অভিযোগ যেমন খতিয়ে দেখতে হবে, তেমনি এ ক্ষেত্রে আইন করার পাশাপাশি সরকারেরও ই-কমার্স সংক্রান্ত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার; যারা এখানকার সার্বিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করবে।
আশার বিষয় হলো, ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে বলে বাণিজ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন। এমনকি ডিজিটাল কমার্স আইন করার বিষয়টিও সরকার ভাবছে। স্বাভাবিকভাবেই বিকাশমান ই-কমার্স খাতকে সহযোগিতা করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়, সে জন্য এসব উদ্যোগ জরুরি। তবে আমরা এ-ও মনে করি, ঝুঁকি কমাতে গ্রাহকের সচেতনতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চটকদার বিজ্ঞাপন, মূল্যছাড় ও প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট না হয়ে বাস্তবতার নিরিখে বাজারদর বিবেচনা করলে প্রতারণার ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যেতে বাধ্য। গ্রাহক সচেতনতা তৈরিতে ইতোমধ্যে সরকারের কাজের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের গণবিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ প্রশংসনীয় নিঃসন্দেহে। সচেতনতার এ কাজটি আরও ব্যাপক মাত্রায় প্রচারে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সর্বশেষ আলোচনায় আসা ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আলেশা মার্ট, আদিয়ান মার্ট, ফাল্কগ্দুনীশপ ও সিরাজগঞ্জশপের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুরোধ জানিয়েছে বলে সমকালে প্রকাশ।
আমরা চাই, এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের নজরদারিতে রাখা হোক। তারা যেন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা করে মানুষের পাওনা পরিশোধ করতে পারে, তা নিশ্চিত হোক। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ ও ধামাকাশপে কয়েক লাখ গ্রাহক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাতে পুরো ই-কমার্স খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এভাবে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সংশ্নিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে হবে। তাছাড়া গ্রাহক হয়রানির অন্যান্য বিষয় যেমন, এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য ধরনের পণ্য সরবরাহ করা; নকল পণ্য দেওয়া বা মান ভালো না হওয়া; সঠিক সময়ে সরবরাহ না করা ইত্যাদি অভিযোগও নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।