
অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ ||
হৃদরোগ বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি অর্থাৎ মৃত্যু এবং অক্ষমতার প্রধান কারণ। প্রতি বছর ১ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ মারা যায় এই রোগে। এই পরিসংখ্যান হলো সারাবিশ্বে সকল মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ এবং অসংক্রামক ব্যাধির কারণে যে মৃত্যু হয় তার অর্ধেক। আর কার্ডিওভাস্কুুলার ডিজিজে মৃত্যুর শতকরা ৮৫ ভাগই হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের কারণে। এই হৃদরোগের অনেকগুলো কারণ রয়েছে : ধুমপান থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস. উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি বা স্থুলতার পাশাপাশি বায়ু-দুষণ এবং তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত চ্যাগাস ডিজিজ ও অ্যামায়লয়ডোসিসের মতো রোগও আছে। আর বর্তমানে করোনা মহামারীর এই সময়ে হৃদরোগীরা দ্বিমূখী আতংকের মধ্যে আছে। একদিকে হৃদরোগীরা যেমন করোনা ভাইরাসের মারাত্মক ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার হুমকির সম্মূখীন অন্যদিকে তারা এই মহামারীর সময়ে তাদের হার্টের নিয়মিত স্বাভাবিক রুটিন চেক-আপগুলো করাতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিাততে আপনার জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হার্টকে কাজে লাগান যেমন, একটি হৃদহিতকর জীবনযাপন করার জন্য কী কী করা দরকার সেই জ্ঞান অর্জন করুন এবং আপনার জীবনের গুনগত মান উন্নয়ণের লক্ষ্যে সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান তথা ভবিষ্যতেও নিরবচ্ছিন্নভাবে নিজের জীবনচর্চায় পরিবর্তন আনুন।
আপনার ক্ষমতা বা প্রভাবকে ব্যবহার করতে হৃদয়কে কাজে লাগান যেমন,
ক্স একজন ব্যক্তি হিসেবে আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনার প্রিয়জন ও সমাজে নিজেকে রোল মডেল হিসাবে উপস্থাপন করুন,
ক্স একজন চিকিৎসক হিসেবে আপনি আপনার রোগীর স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করুন,
ক্স একজন শিল্পপতি হিসেবে আপনার কর্মচারীদের হৃদ-স্বাস্থ্য উন্নয়নে অর্থাৎ হার্ট সুস্থ রাখতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করুন,
ক্স রাষ্ট্র হিসেবে জনবান্ধব স্বাস্থ্য-নীতি প্রনয়ণ করুন এবং রাষ্ট্রের জনগণের হৃদ-স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে চিনির উপর কর আরোপ করুন, ধূমপান নিষিদ্ধ করুন এবং বায়ু দূষণ কমিয়ে আনতে জনহিতকর পদক্ষেপ গ্রহন করুন।
আপনার সহানুভূতিশীলতার স্বাক্ষর রাখুন যেমন, ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে সমাজের দুর্বল ও অরক্ষিত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যান: বিশেষ করে এই করোনা মহামারীর সময় তারাই সবচেয়ে অরক্ষিত যারা হার্টের নানাবিধ অসুখে ভুগছেন।
আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে আপনি সবসময় ভালো কিছু বাছাই করুন যেমন, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন, ধূমপান বর্জন, নিরাপদ ও পরিমিত অ্যালকোহল গ্রহনের নির্দেশিকা মেনে এবং পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও ব্যয়াম করার মাধ্যমে নিজের সন্তান ও প্রিয়জনদের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করুন।
আপনার হৃদয়ের কথা মন দিয়ে শুনুন যেমন, আপনার যদি অন্তর্নিহিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে অর্থাৎ হৃদরোগ, হার্ট ফেইলিউর, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি বা স্থুলতা থাকে তবে কোভিড-১৯ এর মহামারীর কারণে চেক আপ করানো থেকে বিরত থাকবেন না। আর যেকোন জরুরী প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
আপনার নিজের, প্রিয়জনের এবং আশেপাশের সবার সাহয্যে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসুন Ñ এই মহামারীর সময়ে স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে যারা রয়েছে তারাই অরক্ষিত। তাই সরকার, এনজিও এবং বিত্তবানদের সাথে নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী এবং সমাজে অরক্ষিত ও অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের সহায়তা করতে তথা একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
বিশ্ব হার্ট দিবস এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশ্বিক প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে ওর্য়াল্ড হার্ট ফেডারেশন এবং তার সদস্য সংস্থাসমূহ এই যেমন আমরা হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছি এবং প্রতিটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্টকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে উদ্ভুদ্ধ করতে পারছি। নিজের হার্ট সুস্থ রাখুন, সবার সাথে যুক্ত থাকুন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন কুমিল্লা