দেশে করোনা
মহামারির প্রকোপ কিছুটা কমেছে। পরীক্ষা বিবেচনায় দৈনিক আক্রান্তের হার
পাঁচের নিচে নেমেছে। তুলনামূলকভাবে মৃত্যুও অনেক কমেছে। সোমবার সকাল ৮টার
আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৫ জন। বিশেষজ্ঞরা মনে
করছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে এই সাফল্যের ক্ষেত্রে টিকার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
এই সাফল্যে উদ্দীপিত হয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
৭৫তম জন্মদিনে মঙ্গলবার ৭৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার এক
ব্যতিক্রমী কর্মসূচি হাতে নেয়। এতে সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী মিলিয়ে মোট ৮০
হাজার কর্মীকে কাজে লাগানো হয়। এর পাশাপাশি নিয়মিত কর্মসূচির আওতায় আরো
পাঁচ লাখ মানুষকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ
টিকাদানের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ
মিলিয়ে মঙ্গলবার প্রায় পাঁচ কোটি ডোজ টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর
জন্মদিন উদযাপনের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। এক দিনে ৮০ লাখ
(৭৫+৫) ডোজ টিকা দেওয়া যাবে, এটি ভাবনারও অতীত ছিল। বলা যায়, স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয় এক দুরূহ দায়িত্ব পালন করেছে। দেশের চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ, এক
হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের ৪৪৩টি ওয়ার্ডে একযোগে এই
টিকা দেওয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়নে ও সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ছিল
তিনটি করে বুথ। এত বড় আয়োজন সম্পন্ন করতে গেলে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হতেই
পারে। তবে তা ছিল গত আগস্টের বিশেষ টিকা অভিযানের তুলনায় অনেক সুশৃঙ্খল।
মাসখানেক পর এই ৭৫ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকাও দেওয়া হবে একই দিনে এমন
বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে। জানা যায়, সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ১০
কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। এর অর্থ প্রায় ২০ কোটি ডোজ
টিকা দিতে হবে। টিকাদান কর্মসূচি সেভাবেই সম্প্রসারিত করতে হবে। মধ্যখানে
টিকার সংকট না হলে এত দিনে আরো অনেক বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যেত। এখন টিকা
পাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন সংকট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত
দেশে টিকা এসেছে চারটি ব্র্যান্ডের মোট পাঁচ কোটি ৭০ লাখের মতো।
সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ফাইজার ও সিনোফার্মের দুটি বড় চালান আসতে পারে বলে
জানা গেছে। আর এ বছরের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে কেনা ১০ কোটি ডোজের পাশাপাশি
আরো ছয় কোটি ডোজ এবং চীনের সিনোফার্মের সাত কোটি ডোজ টিকা আসবে। ভারত থেকেও
শিগগির টিকা রপ্তানি আবার শুরু হবে বলে জানা গেছে।
করোনা মহামারি শুধু
বহু মানুষের প্রাণই কেড়ে নেয়নি, জীবন-জীবিকাকেও বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। এ
থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নির্ভরযোগ্য উপায় হচ্ছে টিকা নেওয়া। তার পরও
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা আশা করি, দ্রুততম সময়ে টিকা পাওয়ার
যোগ্য সবাইকে টিকার আওতায় আনা যাবে।