Published : Thursday, 30 September, 2021 at 12:00 AM, Update: 30.09.2021 1:27:09 AM
তানভীর
দিপু:
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মাশরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি
শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আসেননি স্কুলে।
কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে সরকারী
কর্মচারি আইন অনুযায়ী বিভাগী ব্যবস্থা গ্রহন করে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
পরে জানা যায়, তিনি বিদ্যালয় এবং শিক্ষা বিভাগের কাউকে না জানিয়েই বিদেশ
পাড়ি জমিয়েছেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল
মান্নান স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে মাধ্যমে দুই বছর পর চলতি ২০২১ সালের
এপ্রিল মাসে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ঘোষণা করা হয়।
মাশরা সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রীনা আরা বেগম জানান, জান্নাতুল
ফেরদৌস কাউকে কিছু না জানিয়েই বিদ্যালয়ে আসেনি। পরে তিনি অনুপস্থিত থাকায়
আমি বিষয়টি উর্দ্ধতণ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। জেনেছি তিনি আমেরিকা চলে
গেছেন।
একই ভাবে ছুটি নিয়ে আর স্কুলে ফিরেননি পূর্ব পূর্ণমতি সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মল্লিকা হাসান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা
ফেরদৌসি আক্তার জানান, ২০১৯ জুলাইতে ছুটি নিয়ে তিনি আর স্কুলে আসেননি। পরে
তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়। শুনেছি চাকরি বহাল রাখতে তিনি
জেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করছেন।
মাতৃত্বকালিন ছুটি, অসুস্থতার জন্য
ছুটিসহ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা জেলার ২৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা
নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এর মধ্যে ৭ জনই না জানিয়ে বিদেশ চলে গেছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, সম্প্রতি স্কুল খোলার
পর আরো তথ্য নেওয়া হচ্ছে। জেলার যে সকল প্রাথমিক শিক্ষকরা সরকারি
চাকুরীবিধি পরিপন্থি কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা
এমন অনুপস্থিত থাকেন তাদের উপস্থিতিসহ ও অন্যান্য ডাটা সংগ্রহ করে সাথে
সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। স্কুলে না এসেই বেতন পাবার কোন সুযোগ নেই।
জেলা
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৭ শিক্ষক ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন আর কর্মস্থলে আসেননি।
এদের বেশিরভাগই নারী। এর মধ্যে মাতুত্বকালিত ছুটি নিয়ে বিদেশে গেছেন সাতজন।
এ সাত জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনকে চাকুরী থেকে
বরখাস্ত করা হয়েছে। দু জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে। সরকারি চাকুরীজীবি
বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ বিদেশ যেতে পারবেন না।
তারা কতৃপক্ষকে না জানিয়ে গোপনে দেশের বাহিরে যাওয়ায় ও দীর্ঘদিন কর্মস্থলে
অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়েছে। এছাড়া দেশেই থাকা ২০ শিক্ষক
অসুস্থতার ছটি নিয়ে আর কর্মস্থলে আসেননি। তাই এ ২০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয়
মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকি নয়
জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।
মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা
অফিসার ফওজিয়া আক্তার জানান, এটা খুবই দুঃখজনক। কেউ হুট করে না জানিয়েই
শিক্ষকতার মত পেশা ছেড়ে চলে যাবেন, এটা ঠিক নয়। এছাড়া সেই চলে যাওয়া
শিক্ষকের অনুপস্থিতে অন্য শিক্ষকদের উপর চাপ বাড়ে। অব্যহতি নিয়ে গেলে
শিক্ষা বিভাগ সে পদটি শূণ্য করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা
কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেন। মুরাদনগর উপজেলার এম চার শিক্ষকের মধ্যে
দুজন দেশের বাইরে গিয়েছিলো এর মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে একজন বিদেশ থেকে
অব্যহতি পত্র দিয়েছে। আর বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া
হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, যারা
অনুমতি না নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন আমরা আধুনিক টেকনোলজির মাধ্যমে তাদের বের
করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। করোনাকালিন সময় ও এর আগে দেশে উধাও ও বিদেশে
থাকা ২৭ জনের বিরুদ্ধো মামলা দায়ের করেছি এর মধ্যে ১৬ জনকে চাকুরি থেকে
বহিস্কৃত করা হয়েছে। নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে।