শাহীন আলম, দেবিদ্বার।
কুমিল্লার
দেবিদ্বারে গোমতীর চর ঘিরে স্বপ্ন বুঁনছে দু’পাড়ের শত শত কৃষক। শীতের
শুরুতে চরের উর্বর মাটিতে শীতকালীন বিভিন্ন শাক-সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার
করছেন তাঁরা। আধুনিক কৃষির ছোঁয়া না লাগলেও কৃষকদের শ্রমে-ঘামে রঙিন হয়ে
উঠেছে গোমতীর বির্স্তিন চর। শাক-সবজির শুভ্র হাসি ফসলের মাঠে মাঠে। জানা
গেছে, চরের এ ফসল সুস্বাধু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বেশি । এছাড়াও
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারের এসে জমি থেকে ফসল কিনে নিয়ে যান। শীত
মৌসুমে পাইকারেরা বেশি আসেন এ চরে। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,
শীত মৌসুম শুরুর আগে লাল শাক, পুইঁশাক, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক, ধনেপাতা,
আখ, মূলা, ঢেড়স, গোল আলু, সিম, মিষ্টি আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা জাতের
শাক-সবজির পরিচর্চা করছেন কৃষকরা। কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় একই ফসলে তিন
চার রকমের শাক সবজির পরিচর্চা করছেন। নিরানী, জমির কেইল করা, কীটনাশক
ছিটানোসহ নানা কাজ করছেন তাঁরা। তাঁদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন নারীরাও।
আলমগীর হোসেন গোমতীর চরের কৃষক। তিনি ১২শতক জমির এক অংশে লাল শাক, এক অংশে
ধনে পাতা, অন্য অংশে মুলা ও ফুলকপি চাষ করছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,
প্রতি বছর শীতের শুরুতে জমির পরিচর্চা বেশি করতে হয়। সংসারে সবজির চাহিদা
পূরণ করে তিনি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। বিক্রি টাকায় সংসারের অন্য খরচ
করেন। তিনি আরও বলেন, শীত ছাড়াও গ্রীষ্ম মৌসুমেও জমিতে শসা, ঝিঙে, পটল,
বরবটি, কড়লা, লাউ, চাল কুমড়া, পাটশাক, কাকড়লসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হয়। শীতে
নতুন সবজির চাহিদা বেশি হওয়ায় বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। এ চরে কোন মৌসুমেই
বাদ যায়না চাষবাদ। শীত মৌসুমে এ চরে শাক-সবজির বাম্পার ফলন হয়।
কৃষক
বাবুল মিয়া ৬০ শতক জমিতে দেশী শসা চাষ করেছেন। তিনি জানান, এবার শসার
উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রতি মণ শসা ভালো দামেও বিক্রি হয়েছে। এলাকার চাহিদা
মেটানোর পাশাপাশি তার শসা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। লেখা পড়ার পাশাপাশি
চরের ৫২ শতক জমিতে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চরের বাসিন্দা সাব্বির
হোসেন। সাব্বির হোসেন বলেন, পড়ালেখার ফাঁকে জমি পরিচর্চা করি। বর্তমানে
বেগুন, ঝিঙা, কড়লা, শসি ও মরিচ রয়েছে। এসব চাষ করে সংসার ও পড়ালেখা চালান
সাব্বির। পুরাতন বাজারের কৃষক ওয়াহেদ আলী বলেন, চরাঞ্চলের জমি অসমতল ও
বালির পরিমাণ বেশি হওয়ায় একই জমিতে ছয়-সাত প্রকার ফসল চাষ করা যায়। শুরুতে
আখ চাষের জন্য জমি তৈরি করি, পরে ওই জমিতে লাল শাক, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি
চাষ করি। এসব সবজি রোপণের ১৫/২০ দিন পর সারিবদ্ধভাবে মরিচ, ঢেঁড়স ও পুঁই
শাকের বীজ লাগানো হয়। দুই এক মাসের মধ্যে সবজি বাজারেও বিক্রি করা
হয়।উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান বলেন, যে চর পতিত থাকার
কথা ছিলো ওই চরে কৃষকের হাতের ছোঁয়ায় সোনা ফলছে। গোমতীর এ চরে বারো মাসই
ফলন হয়। নদীর দু’পাশের কৃষকরা স্ব-উদ্যোগে এসব জমি চাষাবাদ করে আসছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন সময়ে চরের কৃষকদের বীজ সার প্রণোদনা দেয়া
হয়।