নিজস্ব
প্রতিবেদক: কুমিল্লা শহরের নানুয়া দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে হনুমানের
মূর্তির পায়ে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখেছিলেন ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
তার বাড়ি কুমিল্লার শহরের সুজানগরের খানকা মাজার শরীফ সংলগ্নে। তিনি নূর
আহাম্মদ আলমের ছেলে। পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সে রং
মিস্ত্রি ছিল। কিন্তু ভবঘুরে। তার স্ত্রী রয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর রাত ২ টার
পরে সে এ ঘটনা ঘটায়।
সিসি ফুটেজে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, ইকবাল হোসেন
নানুয়া দিঘির পাড়ের কাছে দারোগা বাড়ি মসজিদ ও মাজার থেকে একটি কোরআন শরীফ
সংগ্রহ করে এবং সেটি রেখে আসার পর তার হাতে হনুমানের হাতে থাকা গদা দেখতে
পাওয়া যায়। মাজার এলাকার ফুটেজ ও দিঘির পাড়ের একটি বাড়ির ফুটেজ দেখে এ তথ্য
নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এছাড়া নানুয়া দিঘীর পাড়ে বিশৃঙ্খলা দিনেও তাকে
উত্তেজিত জনতার সাথে দেখা গেছে সিসিটিভির একটি ভিডিও ক্লিপে।
সিসি
ফুটেজে দেখা যায়, দারোগা বাড়ি মাজারের খেদমতকারী ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ূন
নামে দুইজন দারোগা বাড়ি মসজিদে প্রবেশ করেন রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে। পরে ১০টা
৫৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করে ইকবাল হোসেন। রাত ২টা ১৮ মিনিটে সে কোরআন
শরীফটি সংগ্রহ করে। সে দারোগা বাড়ি মসজিদের উত্তরপাড়ের দিক দিয়ে একটি কোরআন
শরীফ নিয়ে উত্তর দিকে (ইউসুফ স্কুলের দিকে নানুয়া দিঘির সড়ক দিয়ে) যায়।
কোরআন শরীফ হাতে ইকবাল হোসেন যায় দিগাম্বরীতলা জগন্নাথ মন্দিরের সামনে দিয়ে
কাপড়িয়া পট্টি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সামনে দিয়ে চকবাজার কাসারিপট্টি
পূবালী ব্যাংকের পাশের গলির বিদ্যুত অফিসের সামনে যায়। সেখান থেকে মোড়ে এসে
দাঁড়ায়। সেখানে নৈশপ্রহরীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। আবার
একই রাস্তায় সে নানুয়া দিঘির পাড়ে আসে। রাত তিনটা ১২ মিনিটের দিকে সে পূজা
মণ্ডপের হনুমানের মূর্তির হাতে থাকা গদা নিয়ে নানুয়ার দিঘির পশ্চিম পাড়ের
রাস্তার দিকে আসে আবার ঘুরে দারোগা বাড়ি মাজারের সড়কে চলে যায়। দারোগা বাড়ি
মসজিদে সে প্রবেশ করে ৩টা ২২ মিনিটে। সকালে যখন মানুষ বিক্ষোভ করে তখন সে ঐ
বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে আইন শৃংখলা বাহিনীকে।
এছাড়া
মাজার থেকে কোরআন নেওয়ার আগে মাজারের নামাজের স্থানে দুইজন ব্যাক্তির সাথে
বসে কথা বলতেও দেখা যায় সিসি ফুটেজে। সেখানের একটি দানবাক্সের উপর থেকে
কোরআন নিয়ে নামাজের স্থানে ইকবালের হাঁটা চলা ও অবস্থান করার দৃশ্যও ধরা
পরে।
এদিকে, ইকবাল হোসেনের মা আমেনা বিবি জানান, শুক্রবার থেকেই পুলিশ
তার ছেলের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে। এলাকার লোকজনের কাছে আমরা খুব হেয়
প্রতিপন্ন হচ্ছি। এমন ছেলে আমার না থাকাই ভালো ছিলো। তাকে যেন মেরে ফেলা
হয়। তার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, গত ১০ বছর ধরে সে মানসিক
ভারসাম্যহীন। সে দুইটি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী আয়েশা বেগম। তার বাড়ি
কুমিল্লার বরুড়ার কচুয়ায়। তার গর্ভে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরে ঐ স্ত্রী
প্রেম করে ছেলেসহ বিয়ে করে ফেলায় পরে আবার তাকে আমরা বিয়ে দেই। দ্বিতীয়
স্ত্রীর নাম রুমি আক্তার। তার একটি মেয়ে রয়েছে। তার বাড়ি কুমিল্লার মিয়ার
বাজারের কাদৈর গ্রামে।
আমেনা বিবি জানান, তার তিন ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে ইকবাল হোসেন বড়। সে রং মিস্ত্রির কাজ করতো।
অন্যদিকে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবারও কুমিল্লায় ছিলো
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা। বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর নানুয়া দিঘীর
পাড়ে ওই অস্থায়ী পূজা মন্ডপের স্থানটি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ পুলিশের
ডিআইজি হেডকোয়ার্টার (ক্রাইম) এ ওয়াই এম বেলালুর রহমানসহ পুলিশের উর্দ্ধতন
কর্মকর্তারা। এসময় তারা স্থানীয় বাসিন্দা এবং হিন্দুুধর্মীয় নেতাদের সাথে
কথা বলেন। পরে তারা পার্শ্ববর্তী যে মাজার থেকে কোরআন আনা হয়েছিলো সেই
স্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শক দলে ডিআইজি হেডকোয়ার্টার (ক্রাইম) এ ওয়াই
এম বেলালুর রহমান, এআইজি (অপারেশন) জালালউদ্দিন, এআইজি মোহাম্মদ উল্লাহ,
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)
শাহাদাত হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে
উঠে আসা মাজার এলাকায় পরিদর্শনে আসেন র্যাব-১১ কোম্পানি কমান্ডার লে.
কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা। এসময় র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর অধিনায়ক মেজর
মোহাম্মদ সাকিব হোসেনসহ র্যাবের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা স্থানীয়
মুসল্লিদের সাথে কথা বলেন এবং ঘটনাস্থলটি পর্যবেক্ষণ করেন। র্যাব-১১
কোম্পানি কমান্ডার লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, অন্যান্য বাহিনীর
সাথে সাথে র্যাবও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারাও চেষ্টা করছে
ঘটনাটির মূলহোতাকে আটক করতে।