তানভীর দিপু ||
জ্বালানি
তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কুমিল্লা থেকেও বন্ধ রয়েছে গণ পরিবহন চলাচল।
শুক্রবার ভোর ছয়টা থেকে কুমিল্লার বাস টার্মিনাল গুলো থেকে কোন রুটে বাস
ছেড়ে যায়নি। আগে থেকে বুকিং থাকায় কিছু কিছু ট্রাক কাভার্ডভ্যান চললেও নতুন
ভাড়ায় কেউ নিচ্ছে না পণ্য পরিবহনও। সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট,
কুমিল্লা-নোয়াখালী-চাঁদপুর মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কোথাও গণপরিবহন বাস
চলাচলের দৃশ্য একবারেই চোখে না পরলেও দেখা গেছে পন্যবাহী যানবাহনের চলাচল।
অনানুষ্ঠানিক ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক যাত্রীই সকালে ভিড়
করেছেন বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কের পাশে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। বাস না
পেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশায়
গন্তব্যে যেতে হয়েছে যাত্রীদের। সময় মত গন্তব্যস্থলে পৌছাতে না পারায়
পরীক্ষাসহ জরুরীকাজে অংশ নিতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এদিকে
শুক্রবার থাকায় সকালে মহাসড়কে যাত্রীর চাপ কম থাকলেও বিকালে যাত্রী বাড়ার
সাথে সাথে বাড়ে ভোগান্তিও, কিন্তু সে পরিমানে বাড়েনি যানবাহন। দু একটি বাস
বিচ্ছিন্ন ভাবে চলাচল করলেও হুড়োহুড়ির কারণে অনেকেই হারিয়েছেন বাসে উঠার
সুযোগ। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁিড়য়ে থেকেও গাড়ী পায়নি অনেকে।
শুক্রবার
সকালে কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, এই টার্মিনাল
থেকে কোন রুটে কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। ধর্মঘটের বিষয়ে নিশ্চিত কোন ধারনা
না থাকায় অনেক যাত্রীই এসেছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরের বাস ধরতে। কিন্তু
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন মহাসড়কের দিকে বিকল্প যানবাহনের
আশায়। ঢাকার যাত্রী হুমায়ুন মাহমুদ জানান, আজ ঢাকায় আমার একটি চাকরির
পরীক্ষা আছে। ভেবেছি সকালে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিবো। বাস না চলায় এখন সময় মত
পেঁছানো খুবই কঠিন হয়ে যাবে।
একই দশা আমিনুলের। বিকাল ৩টায় পরীক্ষা।
সময় নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও বিকল্প পরিবহন নিয়ে পরেছেন ভোগান্তিতে।
পদুয়ারবাজার থেকে মাইক্রোবাসে ভাড়া জনপ্রতি ৫ শ’ টাকা চাচ্ছেন চালকরা। এই
ভাড়ায় ঢাকায় যাওয়া কলেজ ছাত্র আমিনুলের জন্য চরম ভোগান্তির। তিনি জানান,
হুট করে ধর্মঘট ডাক দেয়াও সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি। এখন দ্বিগুণ
ভাড়ায় যেতে হবে। আর মহাসড়কে নেই পর্যাপ্ত গাড়িও।
ছোট ছোট পরিবহনের চালকদের দাবি, দূর গন্তব্যে গাড়ির খরচ বেশি। তাই নিতে হয় বাড়তি ভাড়াও।
এদিকে
কুমিল্লার শাসনগাছা ও চকাবাজার বাস টার্মিনাল থেকেও ছেড়ে যায় নি কোন বাস।
যাত্রী নিতে টার্মিনালগুলোর সামনে ভিড় জমিয়েছে সিএনজি অটোরিকশা,
মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ছোট ছোট যাত্রী পরিবহন। বাস শ্রমিকরা জানান, বাসের
মালিকের নির্দেশে বাস বন্ধ রয়েছে। মালিকরা যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই পালন
করা হবে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এর আগে করোনাকালীন সময়ে পরিবহন
শ্রমিকেরা দুঃসময় পার করেছে। এখন আবার এই স্থবির পরিস্থিতি! বারবার এসব
দুরাবস্থা মেনে নেয়া কঠিন। নিয়মিত আয়েই সংকসার চালানো কঠিন, তার উপর বাস
চলাচল বন্ধ। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে পরিবহন শ্রমিকরা।
এদিকে গতকাল
সন্ধ্যায় কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির
আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত দাম দিয়ে বাস চালাতে চান
না মালিকরা। তাই শুক্রবার ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখে ঘোষণা দিয়েছেন
তারা। রবিবার বাস ভাড়ার বিষয়ে যোগাযোগমন্ত্রীর সাথে একটি বৈঠক রয়েছে, সেই
বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আবার গণ পরিবহন চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া
হবে।
একই সুরে কথা বলেছেন ট্রাক মালিক নেতৃবৃন্দও। তারা জানান, রপ্তানি
কাজে ব্যবহৃত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান বাধ্য হয়েই চলতে হবে।এছাড়া আগে বুকিং নেয়া
পণ্যবাহী যানবাহন লোকসান দিয়ে হলেও চলবে। মালিকরা যদি না চান তাহলে
যানবাহন চলবে না।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শুক্রবার সকাল থেকে
কুমিল্লা জেলার বাস টার্মিনালগুলো থেকে ২৬টি ট্রান্সপোর্টের ২ হাজারেরও
বেশি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।