তানভীর দিপু:
গণপরিবহন
বন্ধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ভোগান্তির
মাত্রা ছিলো গত শুক্রবারের তুলনায় দ্বিগুণ। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই
মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল ছিলো খুবই কম। দেখা গেছে যানবাহনের জন্য
মোড়ে মোড়ে অপেক্ষমান যাত্রীদের জটলা। দু একটি বাস বিচ্ছিন্ন ভাবে চলাচল
শুরু করলেও, যাত্রী অনুপাতে এর সংখ্যা পর্যাপ্ত ছিলো না। যে কারনে অতিরিক্ত
ভাড়ায় মাইক্রোবাস-সিএনজি অটোরিকশায় দূরপাল্লার গন্তব্যে যেতে হয়েছে
যাত্রীদের। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও অতিরিক্ত কয়েকগুণ ভাড়া বাড়তি খরচ
হয়েছে যাত্রীদের। অতিজরুরী কাজে ঢাকায় পৌঁছাতে মোটরসাইকেলে এক হাজার টাকায়
রওনা হয়েছেন যাত্রীরা- মহাসড়কে এমন দৃশ্যও চোখে পড়েছে সারাদিন। যাত্রীদের
দাবি, সংকটের কারণে আড়াই থেকে দশগুণ বেশি ভাড়া এখন গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
দ্রুত এই পরিবহন সংকট নিরসন প্রয়োজন। তবে পরিবহন মালিক নেতারা বলছে, রবিবার
কেন্দ্রিয় বৈঠকের আগে পূর্নাঙ্গভাবে শুরু হচ্ছে না যান চলাচল।
গতকাল
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়ারবাজার, ময়নামতি সেনানিবাস, আলেখার চরসহ
বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে বেলা বাড়ার সাথে সাথে মহাসড়কে বেড়েছে
যাত্রীর ভিড়। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শুক্রবার সকাল
থেকে কুমিল্লা জেলার বাস টার্মিনালগুলো থেকে ২৬টি ট্রান্সপোর্টের ২
হাজারেরও বেশি বাস চলাচল বন্ধ। নগরীর তিনটি বাস টার্মিনাল জাঙ্গালিয়া,
শাসনগাছা ও চকাবাজার বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি কোন বাস। যাত্রী নিতে
টার্মিনালগুলোর সামনে ভিড় জমিয়েছে সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন
ছোট ছোট যাত্রী পরিবহন। তবে জাঙ্গালিয়া থেকে ফেণীগামী যমুনা পরিবহনের কিছু
বাস চলাচল করায় ওই রুটে কিছুটা স্বস্তিতে ছিলো যাত্রীরা। এছাড়া ঢাকা
চট্টগ্রাম রুটে চলেছে কিছু লোকাল বাস। অন্যরা সবাই মাইক্রোবাস, প্রাইভেট
কার, সিএনজি অটোরিকশা এবং মোটর সাইকেলে করে রওনা হয়েছেন গন্তব্যে
উদ্দেশ্যে। পথ ভেঙ্গে এবং যানবাহন পরিবহন করে সময় লেগেছে কয়েকগুণ বেশি। আর
ভাড়ার পরিমান চালকদের কথা মেনে দেয়া ছাড়া কোন উপায়ও ছিলো না। ঢাকা যেতে
প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে জনপ্রতি ৫শ, লোকাল বাসে জনপ্রতি ৩শ এবং
মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা গুণতে হয়েছে যাত্রীদের। যেখানে সাধারণ
বাসে ভাড়ার পরিমান ছিলো মাত্র ২শ টাকা। একই অনুপাতে কুমিল্লা থেকে
চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের দিকে গন্তব্যে গিয়েছেন
যাত্রীরা।
লাকসাম থেকে আসা যাত্রী জহিরুল হক জানান, পরিবহন না পেয়ে
ভেঙ্গে ভেঙ্গে কুমিল্লায় এসেছেন, যাবেন ঢাকায়। তিনি আরো বলেন দেশের
গুরুত্বপূর্ন পরিবহন খাত দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে তা নিয়ে সরকারের উদ্যাগ অতি
জরুরী, নয়তো দেশের অর্থনীতি মারাত্নক ক্ষতি হবে।মাইক্রোতে জনপ্রতি ৫শ টাকা
করে নিচ্ছে। নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জন্য এই টাকায় ঢাকায় যাত্রা
খুবই কষ্টসাধ্য।
আরেক যাত্রী মাসুদুর রহমান জানান, জরুরী প্রয়োজনে ঢাকায়
যাবেন পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। সড়কে পরিবহন নেই, মাঝে মধ্যে ছোট গাড়ী
একটা আসলে আসনের তুলনায় যাত্রী থাকে কয়েকগুন।
নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের
লক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা আলমঙ্গীর হোসেন জানান, তেলের দাম বাড়ানো সিদান্তে
পরিবহন বন্ধ রেখেছে অথচ বর্তমানে বেশির ভাগ যানবাহনই চলছে গ্যাস দ্বারা।
হঠাৎ গন পরিবহন বন্ধ রাখায় ছোট গাড়ীগুলো আকাশচুম্বি ভাড়া দাবী করছে।
কুমিল্লা
বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রিয় কমিটির
পরবর্ত্তী নির্দেশ ছাড়া আমরা বাস বন্ধ রাখবো। তবে সহসাই এ বিষয়ে সূরাহা হবে
আশা করছি। মহাসড়কে কিছু বাস চলাচল করছে এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, কিছু বাস
চলতে দেখা যায় যে গুলোর আমাদের টার্মিনালের নয়। অন্য জেলা থেকে এসে চালকরা
যাত্রী বহন করছে।
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি
অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন
পরিবহন মালিকরা। তাই লোকসান দিয়ে বাস চালাতে চাচ্ছেন না মালিকরা। তাই তারা
শুক্রবার থেকে গাড়ী বন্ধ রেখেছেন। রোববার (আজ) ঢাকায় বিআরটিএ সড়ক ও পরিবহন
মালিক সমিতি ফেডারেশনসহ অন্যান্যা নেতৃবৃন্দ আলোচনা বসছেন। তখন সিদান্ত হবে
পরবর্ত্তী কর্মসূচি নিয়ে। সফল আলোচনা হলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।