কোরআন বোঝার সহজ উপায়
Published : Friday, 12 November, 2021 at 12:00 AM
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) ||
পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সরাসরি ব্যক্তিগত সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং কোরআনের রুচি আস্বাদনের ক্ষেত্রে এ লেখকের অভিজ্ঞতা আছে। এ মহাগ্রন্থ থেকে যথাসম্ভব বেশি কিভাবে উপকৃত হওয়া যায়, এর মাধ্যমে কিভাবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এবং কোরআনের পথে চলে একের পর এক মহান আল্লাহর তাওফিক লাভে কিভাবে ধন্য হওয়া যায়; এ বিষয়ে কোরআনের পাঠকদের আমি সব সময় নিম্নোক্ত পরামর্শ দিয়ে থাকি। কোরআনের মধ্যেই যথাসম্ভব নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কোনো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি যথাসম্ভব বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। কোরআন পড়ে কিভাবে আনন্দ পাওয়া যায়, এ জন্য কোরআন পাঠককে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। কোরআনের অর্থ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
কোরআন তিলাওয়াতকারীর যদি প্রয়োজনীয় আরবি ভাষাজ্ঞান থাকে এবং নিজেই সরাসরি কোরআনের অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়, তাহলে সরাসরি নিজেই কোরআন তিলাওয়াত করে অর্থ অনুধাবন করার চেষ্টা করবে। অন্যথায় কোরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসির ও টীকার শরণাপন্ন হতে পারে। সর্বদা চেষ্টা এটাই থাকবে যেন কোরআনের বেশি বেশি তিলাওয়াত করে, কোনো মানুষের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই যেন সরাসরি কোরআনের অর্থ বুঝতে পারে। অর্থ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে এবং বড় বড় তাফসির গ্রন্থের খুব বেশি আশ্রয় না নিয়ে কোরআনের অমীয় স্বাদ উপভোগ করতে পারে। আর মহান আল্লাহ যে এতটুকু কোরআন তিলাওয়াত করার, কোরআনের অর্থ বোঝার তাওফিক দিয়েছেন এ জন্য তার দরবারে সপ্রশংস কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।
এ ক্ষেত্রে সংশয় নিরসনের প্রয়োজন ছাড়া বিশেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিংবা প্রচলিত পাশ্চাত্য সভ্যতা ও আধুনিক বিজ্ঞানপ্রসূত রাজনৈতিক, সামরিক অথবা আঞ্চলিক ও দলীয় বিভিন্ন চিন্তাধারা অনুযায়ী রচিত দীর্ঘ আলোচনা থেকে বেঁচে থাকা উচিত। কেননা স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন পানির কূপের ওপর যেমন পত্র-পল্লববিশিষ্ট ঘন বৃক্ষের ছায়া আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তেমনি বহু সময় মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞান, বুদ্ধি, নেতৃত্ব ও দলীয় লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ছায়া কোরআনের স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন উৎসর ওপর আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন সে মাধুর্য ও স্বাদ, সেই মৌলিকত্ব ও স্বচ্ছতা আর অবশিষ্ট থাকে না, যা কোরআনুল কারিমের মূল সত্তা ও প্রাণ। বরং অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে, পাঠক অনেক সময় মহান আল্লাহর মূল কালামের চেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়ে যায় কোনো কোনো প্রতিভাবান ও বিচক্ষণ মানুষের কথা দ্বারা। কখনো কখনো পাঠক সেই ব্যাখ্যা ও তাফসিরকারের প্রতি পূর্ব থেকেই মুগ্ধ থাকে। ফলে কোরআনের পাঠকের চিন্তা-চেতনায় এ ভাবনা জন্ম নিতে থাকে যে যদি অমুক মুফাসসিরের এ ব্যাখ্যা, এ তাফসির না হতো তবে কোরআনের কাক্সিক্ষত এই সৌন্দর্য প্রকাশিত হতো না; বিকশিত হতো না কোরআনের এই মাহাত্ম্য, এই উৎকর্ষ ও এই গাম্ভীর্য। তাই বিশেষ কোনো মানুষের করা তাফসিরের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা কোনো দায়ি, কোনো নেতা, কোনো ব্যাখ্যাকার ও মুফাসসিরের দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র কোরআনের প্রতি দৃষ্টিপাত করার মানসিকতা এবং সেই আলোকে কোরআন পড়া ও বোঝার অভ্যাস যথাসম্ভব পরিত্যাগ করতে হবে।
‘ইলা দিরাসালিত কোরআনিল কারিম’ গ্রন্থ থেকে আলেমা মুশফিকা আফরার ভাষান্তর