মাদকের
বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষিত হলেও দেশে মাদকের বিস্তার কোনোভাবেই কমছে না।
পুলিশের অভিযানে প্রায়শ অনেক মাদক কারবারি ধরা পড়ছে। কিন্তু নতুন নতুন
কারবারিরা তাদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। আবার গ্রেপ্তারকৃতরাও জামিনে বেরিয়ে
এসে একই কাজ করছে। অনেক জায়গায় মাদক কারবারিদের সঙ্গে কিছু অসাধু পুলিশ
সদস্যের যোগসাজশেরও অভিযোগ রয়েছে। অনেক জায়গায় মাদকের হাট বসার খবরও পাওয়া
যায়। পুলিশের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণেরও অভিযোগ আছে। এমন
পরিস্থিতিতে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
নিজস্ব অনুসন্ধানে ১১১ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির প্রাথমিক
তথ্য পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে কনস্টেবল যেমন আছেন, তেমনি এসআই বা এএসআই
পর্যায়ের কর্মকর্তাও রয়েছেন। এরপর অপরাধ তদন্ত বিভাগের ল্যাবে ডোপ টেস্ট বা
মাদকাসক্তি শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় অনেকেই পজিটিভ হয়। দীর্ঘ
তদন্ত শেষে তাঁদের মধ্য থেকে গত দুই বছরে ৯৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
মাদকাসক্তির
কারণে দেশের তরুণসমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ,
আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে বাড়ছে গুম-খুন-অপহরণের মতো মারাত্মক অপরাধ।
মাদকের অর্থ জোগাতে গিয়ে বাড়ছে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। আবার
সুযোগসন্ধানীরাও মাদকাসক্তদের দিয়ে নানা ধরনের অপরাধ করিয়ে নিচ্ছে। এ
অবস্থায় সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে অভিযানে নামে।
কিন্তু পুলিশ সদস্যরাই যদি এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যান, তাহলে অভিযানের
সাফল্য যে ম্লান হবে, তাতে সন্দেহ কোথায়? ডিএমপি যে উদ্যোগ নিয়েছে, সারা
দেশেই অনুরূপ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন কিছু উদ্যোগ যে
নেওয়া হয়নি তা নয়। তবে সেসব করা হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। তা ছাড়া বড় সংখ্যায়
পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনার কোনো উদ্যোগও আগে দেখা যায়নি। সারা
দেশেই ব্যাপক ভিত্তিতে এই টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের খুঁজে
বের করতে হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ অনুযায়ী মাদক পরিবহন, কেনাবেচা, সংরক্ষণ,
উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্থ লগ্নীকরণ, পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে
সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
প্রয়োজনে এই আইনে মামলা রুজু করতে হবে।
শুধু পুলিশ সদস্যদের মধ্যেই নয়,
সমাজের আরো অনেক ক্ষেত্রেই মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হয়ে থাকে, দেশে সড়ক
দুর্ঘটনার একটি বড় অংশই ঘটে চালকদের মাদকাসক্তির কারণে। শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও
ক্রমেই বাড়ছে মাদকাসক্তদের সংখ্যা। অনেক দিন ধরেই তাদের ডোপ টেস্টের আওতায়
আনার কথা হচ্ছে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তা করা হচ্ছে না। আমরা মনে
করি, ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত শনাক্তের কাজ ব্যাপকভাবে শুরু করা
প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশে মাদকের অনুপ্রবেশ রোধ এবং মাদক পরিবহন ও বিক্রি
কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঘোষিত জিরো টলারেন্স প্রকৃত অর্থেই কার্যকর
করতে হবে।