অবৈধ মারুতির দখলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ বিপাকে মিনিবাস মালিক-শ্রমিকরা
Published : Sunday, 14 November, 2021 at 12:00 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর।
ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে দরজা খোলা অবৈধ মাইক্রোবাস ও মারুতি। প্রাইভেট পরিবহনের ওইসব যান এখন গণপরিবহণে রূপ নিয়েছে। মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মিয়ারবাজার পর্যন্ত প্রাইভেট পরিবহন মাইক্রোবাস ও মারুতিতে চলছে অবাধে যাত্রী পরিবহন। সেগুলোর অধিকাংশরই নেই ফিটনেস ও রোড পারমিট।
প্রতিদিন গেইট পাস (জিপি) ও মাসিক টোকেনের নামে চাঁদা দিয়ে বছরের পর বছর চলছে কয়েক হাজার অবৈধ ওইসব যানবাহন। আর ওইসব প্রাইভেট যানবাহন অল্প ও স্বল্প দূরত্বের যাত্রী উঠানো-নামানোর কারণে সর্বদাই থাকে দরজা খোলা। যে কারণে ওইসব যানগুলো স্থানীয়দের কাছে ‘দরজা খোলা গাড়ি’ নামেও পরিচিত। মহাসড়কের প্রতিটি স্টেশন এলাকায় অবাধে ওইসব যান এলোপাথারী দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠানো-নামানোর কারণে মহাসড়কের গৌরীপুর, চান্দিনা, নিমসার, ময়নামতি এলাকায় যানজট নিত্য সঙ্গী। স্থানীয়দের মতে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে ওইসব যানবাহন।
এদিকে, ওইসব যানবাহন মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত করে অল্প ও স্বল্প দূরত্বের যাত্রী পরিবহনের জন্য মিনিবাস সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশ। গত ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি রেজুলেশনও করেন জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেই মোতাবেক মিনিবাস মালিক সমিতি ইলিয়টগঞ্জ থেকে ময়নামতি পর্যন্ত ৫০টি এবং ময়নামতি থেকে মিয়ারবাজার পর্যন্ত ৩০টি মিনিবাস সার্ভিস চালু করেন। বিধিমোতাবেক রোড পার্মিট ও রেজিস্ট্রেশনও প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মহাসড়কের অবৈধ ওইসব যানবাহনের কারণে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে মিনিবাস সার্ভিস চালু করে বিপাকে পড়েছে মিনিবাস মালিক সমিতি। পর্যন্ত যাত্রী না থাকায় বেতন ভাতা নিয়ে বিপাকে মিনিবাস পরিবহন শ্রমিকরাও।
ময়নামতি-ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি কে.এম জামাল হোসেন জানান, মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে অবৈধ মাইক্রোবাস ও মারুতি সার্ভিস তুলে দিয়ে মিনিবাস চালু করতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সেই সভায় আমাদেরকে ইলিয়টগঞ্জ থেকে ময়নামতি পর্যন্ত ২৬ আসনের ৫০টি ও ময়নামতি থেকে মিয়ারবাজার পর্যন্ত ২৬ আসনের ৫০টি মিনিবাস নামানোসহ সেগুলোর রুট পারমিট ও রেজিস্ট্রেশন প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। সভার রেজুলেশন অনুযায়ী আমাদেরকে জানানো হয়েছিল, আমাদের মিনিবাস সার্ভিস চালু হলে অবৈধ মাইক্রোবাস ও মারুতি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। প্রশাসনের নির্দেশে আমরা মিনিবাস সার্ভিস চালু করেছি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের মিনিবাস সার্ভিস চালু করার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ মাইক্রোবাস ও মারুতি চলাচল আজও বন্ধ করা হয়নি। ওই রোডে হাজার হাজার ওইসব অবৈধ যানবাহন থাকার ফলে আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। অনেক মালিক লোন নিয়ে গাড়ি নামিয়েছেন। এখন লোনের টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না। এমনকি মাস শেষে শ্রমিকের বেতনও দিতে হিমশীম খাচ্ছে। মহাসড়ক থেকে ওইসব অবৈধ যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নিতে আমরা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিওন পুলিশ সুপার (এস.পি) রহমত উল্লাহ জানান, মূলত বিষয়টি নিশ্চিত করবেন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। এছাড়া এই মুহুর্তে ওইসব গাড়িগুলো তুলে দিলে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারে। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের চলাচলে মহাসড়কে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাস নামানো হলে ওইসব সকল পরিবহন বন্ধ করতে পারবো।