Published : Saturday, 13 November, 2021 at 12:00 AM, Update: 13.11.2021 12:39:21 AM
জহির
শান্ত: কুমিল্লায় নিখোঁজের ১০ দিন পর সামিউল নামে এক যুবকের মস্তকবিহীন
লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে
জড়িত থাকার অভিযোগে শাহরিয়ার মাজহারুল নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে সামিউল খুনের কারণ। পুলিশ বলছে, এই খুনের ঘটনায়
সামিউলে বন্ধু সাকিব নামে এক যুবকসহ আরো কয়েজন জড়িত রয়েছে। সমকামিতার জের
ধরে এলাকাচ্যুত হওয়া এবং এ ঘটনায় ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার মাজহারুল প্রাথমিক
জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। কুমিল্লা কোতয়ালী
মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধর জানান, মামলাটি এখনো তদন্তনাধীন।
এ ঘটনায় আরো যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।এর আগে ৮
নভেম্বর সকালে নিখোঁজের ১০ দিন পর কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার
কালিরবাজারের মনশাসন এলাকার একটি ডোবা থেকে সামিউলের খন্ড-বিখন্ড করা মরদেহ
উদ্ধার করে পুলিশ। পরে খুনের ঘটনায় তারা বাবা সৈয়দপুর কাজী বাড়ি এলাকার
পিকআপ চালক নুরুল সালাম গত ৯ নভেম্বর কোতয়ালি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে, মাজহারুলে সমকামিতার তথ্য ফাঁস করে দেয়া নিয়ে সামিউল ও
মাজহারুলের মধ্যে পূর্বের শত্রুতা রয়েছে। এরই মধ্যে একই এলাকার বন্ধু
সাকিবের সাথেও সামিউলের দ্বন্ধ শুরু হলে এই বিষয়টিকে কাজে লাগায় মাজহারুল।
মাজহারুল ও সাকিব একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা মত খুন করে সামিউলকে। গ্রেপ্তার
শাহির শাহরিয়ার মাজহারুল কুমিল্লার কালির বাজার ইউনিয়নের রফিক মিযার ছেলে।
খুনের ঘটনায় জড়িত সামিউলের বন্ধু ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন এলাকার মোবারকের
ছেলে এখনো পলাতক রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯
অক্টোবর থেকে পিকআপচালক সামিউল ইসলাম নিখোঁজ হন। এরপর থেকে স্বজনরা
বিভিন্ন দিকে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি। রোববার (৭ নভেম্বর) এ
ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালী থানায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি
(জিডি) করা হয়। পরদিন সোমবার সকালে স্থানীয়রা একটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন মরদেহ
দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে
সামিউলের মরদেহ শনাক্ত করেন।
উল্লেখ্য, মনশাসন পশ্চিমপাড়া এলাকার এক
ব্যক্তি ধানেক্ষেতের পাশের ডোবায় ঘাস ধোয়ার জন্য যান। সেখানে দুর্গন্ধ পেয়ে
ডোবার একটি প্লাস্টিকের বস্তা ওপরে তুললে মাথা, হাত-পায়ের কবজি দেখতে পান।
পরে ওই স্থান থেকে ৫০০ গজ দূরে নির্জন এলাকার ধানক্ষেতের পাশের আরেকটি
ডোবায় রশি দিয়ে পেঁচানো কোমর থেকে নিচের দুই পায়ের আরেকটি অংশ পাওয়া যায়।
তবে লাশের মাথা ও দুই হাতের কবজির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পুলিশের
জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদের কাছ থেকে ও ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, ক্যান্টনমেন্ট
এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকাকালে স্থানীয় সাকিব ও সামিউল গোপন কথা ফাঁস করে
দেবার ভয় দেখিয়ে মাজহারের নিকট থেকে টাকা আদায় করতো। এতে মাজহারুল সামিউল
এর প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিল। এরই মধ্যে সাকিব ও সামির এর মধ্যে অজ্ঞাত কোন কারণ
নিয়ে অর্ন্তদ্বন্ধ বাধে। এরই মধ্যে সাকিবের সাথে মাজহারুলের ক্যান্টনমেন্ট
এলাকায় দেখা হয় এবং দুইজন সামিউলকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার
মাফিক হত্যাকান্ডের দিন ২৯ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় সামিউলকে মাজহারুল
ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে আসে এবং সৈয়দপুর হয়ে মনশাসন নিয়ে যায়। আগে থেকে
মনশাসনের ধান ক্ষেতের পাশে সাকিব, ফরহাদ, শফিউলসহ অন্যান্যরা দা, হেস্কো
ব্লেড, কিছু সুতলি এবং লাল রশি নিয়ে অবস্থান করছিল। সেখানে নেশা জাতীয়
দ্রব্য সেবন করার পর রাত আনুমানিক ১২টার সময় আসামীরা সুযোগ বুঝে সামিউলকে
গলায় কোপ মেরে হত্যা করে এবং হেস্কো ব্লেড দিয়ে কাধ হইতে মাথা এবং কোমর
হইতে পা পর্যন্ত খন্ডিত করে ফেলে। ভিকটিমের পরিচয় সনাক্তে আঙ্গুলের ছাপ যেন
পুলিশ না নিতে পারে সে জন্য দুই হাতে কজ্বি কেটে এবং খন্ডিত মাথা দূরে
অজ্ঞাত স্থানে মাটিতে পুতে ফেলে।