ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
২০ নভেম্বর দাউদকান্দির গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ দিবস
Published : Saturday, 20 November, 2021 at 12:00 AM
আলমগীর হোসেন, দাউদকান্দি ||
২০ নভেম্বর, দাউদকান্দির ‘গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ’ দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে গোয়ালমারী ও জামালকান্দি গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে বিজয়ী হন মুক্তিযোদ্ধারা। হানাদারদের প্রায় ৭০ জন সৈন্য নিহত হয় সেদিন। দাউদকান্দি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার খোরশেদ আলম প্রদত্ত তথ্য অনুয়ায়ী, ভয়াবহ এই যুদ্ধে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীর শহিদ হন।
‘গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ’ ছিল ২ নম্বর সেক্টরের বড় যুদ্ধগুলোর অন্যতম। ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর ছিল রোজার ঈদ দিন। ঈদের পবিত্র রাতে পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে গোয়ালমারী ও জামালকান্দিতে। এই আক্রকমণের মূল টার্গেট ছিল- গোয়ালমারী চৌধুরী বাড়ি ও গোয়ালমারী বাজারের পশ্চিম পাশের স্কুলে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন ঘাঁটি এবং জামালকান্দিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খান সাহেব ওসমান আলীর বাড়ি। মুক্তিযোদ্ধারা অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রান্ত হলেও দ্রতই তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলতে সক্ষম হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় অংশ নেন গ্রামবাসী। ফলে পরাজিত হতে হয় পাকিস্তানিদের।
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানা এলাকার দক্ষিণাঞ্চল, বর্তমান চাঁদপুল জেলার মতলব থানা ও মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা অঞ্চলে পাকিস্তানি হানাদারদের তৎপরতা সীমিত করতে এবং এ অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করতে এই যুদ্ধের প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী। কেননা এ যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পরাজিত হওয়ার পর দাউদকান্দির দক্ষিণাঞ্চলে আর কোনো অভিযান পরিচালনা করার সাহস করেনি পাকিস্তানিরা। তাই বলা যায়, গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধের মাধ্যমেই শত্রুমুক্ত হয় দাউদকান্দির দক্ষিণাঞ্চল।
গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রধান ভূমিকা ছিল এই যুদ্ধের কমান্ডার বর্তমানে চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এম. ওয়াদুদের। সেদিনকার যুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে তিনি আহত হন। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে একটি রক্তাক্ত দিনের স্মৃতিকথা’ শিরোনামে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এম. ওয়াদুদ লিখেন – ‘ৃ যুদ্ধ শুরু হয় সকাল ৬টায়ৃ।
রাত ১০টার দিকে ১৩ জন আহত মুক্তিযোদ্ধা ও ৩ জন শহিদের লাশ নিয়ে বিজয় মিছিল করে আমরা ফিরে আসি আমাদের আস্তানায়। আমাদের চিকিৎসা চলল নিজস্ব হাসপাতাল নিশ্চিন্তপুরে। সেখানে যাঁদের অক্লান্ত সেবা ও চিকিৎসায় আমরা সুস্থ হয়ে উঠি তাদের কথা জীবনে কখনও ভুলতে পারব না।
২০ শে নভেম্বরের বিজয়ের সাথে মতলব, দাউদকান্দি, কচুয়া ও চাঁদপুরের উত্তরাংশ হানাদার মুক্ত হয়।’ শহিদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিরেন দাবি থাকলেও, গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ নিয়ে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও কোনো স্মৃতিস্তম্ভ হয়নি। গোয়ালমারী বাজারের পাশে সিমেন্ট দিয়ে কিছু ইট পুঁতে রাখা হয়েছে। যা কোনক্রমেই মুক্তিযুদ্ধকে রিপ্রেজেন্ট করে না বলে অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। তাই দ্রুতই সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় তরুণ প্রজম্ম।
তিন বছর হল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গোয়ালমারী-জামালকান্দি যুদ্ধ স্সৃতিস্তম্ভের নকশাসহ ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করলেও এই মহতি উদ্যোগটি আজো বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা।