অত্যন্ত
সুখের বিষয়, বাংলাদেশের তরুণসমাজ চিন্তায়, চেতনায়, মননে ও কর্মে অনেক
দেশের তরুণদের তুলনায় এগিয়ে আছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। তারই একটি প্রমাণ উঠে
এসেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক জরিপ সংস্থা
গ্যালপ ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত এক জরিপে। ‘দ্য চেঞ্জিং চাইল্ডহুড’
শিরোনামের জরিপ অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতন তরুণদের সংখ্যার
বিচারে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ও আয়সীমার ২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে
দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথম স্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া এবং দ্বিতীয় অবস্থানে
বাংলাদেশ ছাড়াও আছে জিম্বাবুয়ে। গত বৃহস্পতিবার ইউনিসেফের এক সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে বয়স্কদের তুলনায় তরুণ
জনগোষ্ঠীর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সচেতনতার হার বেশি। সচেতন
তরুণদের ৯০ শতাংশের বেশি মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়
সরকারের আরো দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শিশুদের অর্থনৈতিক অবস্থা মা-বাবার
চেয়ে ভালো হবে এমন মনে করা তরুণের সংখ্যাবিচারে শীর্ষ চারটি দেশের মধ্যে
রয়েছে বাংলাদেশ। তরুণ জনগোষ্ঠীর ৮১ শতাংশ বিশ্বাস করে, শিক্ষার অবস্থা আগের
প্রজন্মের তুলনায় উন্নত হয়েছে, যা বাংলাদেশকে শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে
স্থান করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের তরুণরা যে এগিয়ে রয়েছে এবং ক্রমেই এগিয়ে
যাচ্ছে এর আগেও বিভিন্ন জরিপ বা গবেষণায় তা উঠে এসেছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর
ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত জানুয়ারি
থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এই
গবেষণায় বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্যসহ ২৩টি দেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী আট হাজার
তরুণের মতামত, অভিজ্ঞতা, সদিচ্ছা এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তাদের
দৃষ্টিভঙ্গি জানার চেষ্টা করা হয়। এসব গবেষণায় উঠে আসে যে তরুণরা মনে করে,
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে
তরুণদের সম্পৃক্ত করা হলে এমন সব উদ্ভাবনী ধারণা আসবে, যা লক্ষ্য অর্জনকে
আরো দ্রুততর ও সুসংহত করবে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের তরুণরা শুধু
সচেতনই নয়, বিভিন্ন ফোরামে তারা এ বিষয়ে নিয়মিতভাবে তাদের মতামতও তুলে
ধরছে। তাদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। যদিও তাদের বক্তব্য অনেক সময়ই
নীতিনির্ধারকদের যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হয় না বলেই মনে করা হয়।
বিশ্বের
অনেক দেশ ও অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব
ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর সংখ্যা। বিশ্বব্যাংকের এক
গবেষণায়ও উঠে এসেছে ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় চার কোটি
মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে, যার মধ্যে বাংলাদেশের থাকছে একটি বড়
অংশ। এমন প্রেক্ষাপটে তরুণরা ঠিকই উপলব্ধি করছে যে আমাদের আরো বেশি উদ্যোগী
হতে হবে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের জনজীবন রক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে
নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার এই সংগ্রামে তরুণদের অন্তর্ভুক্তি আরো
বাড়াতে হবে।