Published : Saturday, 4 December, 2021 at 12:00 AM, Update: 04.12.2021 12:50:41 AM
রণবীর
ঘোষ কিংকর: কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ভ্রমণ পিপাসু ৬ বন্ধু প্রতি
শুক্রবার ঘুরতে বের হন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। মোটরসাইকেল যোগে
দূর-দূরান্তের ঐতিহ্যবাহী মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করা বা দর্শনীয়
কোন স্থান পরিদর্শণ করাই তাদের সখ।
প্রতি শুক্রবারের মত ৩ ডিসেম্বর
সকালেও দুই মোটরসাইকেল যোগে চান্দিনা ছাড়েন তারা। প্রথমেই ছুটে না
কুমিল্লার পাশ্ববর্তী জেলা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায়। হাজীগঞ্জের বড়
মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে চাঁদপুরের নদী মোহনায় উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে
তারা। কিছুদূর যেতে না যেতেই ছয় বন্ধুর ভ্রমণ দলের ভাঙ্গন ঘটনায় ঘাতক
বোগদাদ।
ওই বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় চান্দিনা পৌরসভার
১নং ওয়ার্ড বেলাশহর এলাকার মো. আবদুল কাদের এর ছেলে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি
দুই সন্তানের জনক মো. মনির হোসেন (৩২), তাজুল ইসলামের ছেলে ফার্নিচার
মিস্ত্রি মো. সোহাগ হোসেন (২৫) অপরজন হলেন মজনু মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রী মো.
সুজন মিয়া (২২)।
প্রত্যক্ষদর্শী সুমন চন্দ্র দাস জানান, তারা দুই
মোটরসাইকেল যোগে হাজীগঞ্জ থেকে চাঁদপুর শহরের দিকে যাওয়ার পথে কুমিল্লাগামী
বোগদাদ ট্রান্সপোর্টের বাসটির সাথে একটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়। এদিকে, মোটরসাইকেলটি চাপা দিয়ে ঘাতক ওই
বাসটি পালিয়ে যাওয়ার সময় হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় বাসটি আটক করে। ততক্ষণে
বাসের চালক পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার
ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ।
অপরদিকে, পাশ্ববর্তী বাড়ির তিন
বন্ধুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চিৎকার করে বুক ফাঁটিয়ে
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে তাদের পরিবারের স্বজনরা। পাশাপাশি বাড়ির বাসিন্দা
হওয়ায় তিন পরিবারের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। সন্তান হারানোর
বেদনায় বার বার মুর্ছা যাচ্ছে মা-বাবা। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের
শান্তনাও যেন বাঁধ মানছে না। এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের পিতা মনির এর
স্ত্রী যেন দিশেহারা। সন্তান সম্ভাবা সোহাগের স্ত্রী জ্ঞান শূন্য অবস্থায়
লুটিয়েছে মাটিতে। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক মজনু মিয়া। ১৬ বছর বয়সী
মেয়েকে হারিয়েছে চার বছর আগে। উপার্জনক্ষম বড় ছেলে সোহাগকে হারিয়ে
বাকরূদ্ধ মজনু মিয়া ও তার স্ত্রী ফরিদা। সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে কারোর যেন
চোখের পানি ধরে রাখার উপায় নেই। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনায় স্তব্ধ ওই এলাকা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্তানদের মরদেহ পৌঁছার অপেক্ষায়
স্বজনরা।
নিহত সুজন এর পিতা মো. মজনু মিয়া জানান, দীর্ঘদিন যাবত তারা ৬
বন্ধু শুক্রবার দিন আসলে বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়তে ও ঘুরতে যায়। আজকে (৩
ডিসেম্বর) সকালে হাজীগঞ্জ নামাজ শেষে চাঁদপুর যাওয়ার পথে ওই দুর্ঘটনার
শিকার হয় তারা।