ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দেবিদ্বার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালি
শাহীন আলম
Published : Saturday, 4 December, 2021 at 7:51 PM
দেবিদ্বার মুক্ত দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালিকুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিলো দেবিদ্বার। এ উপলক্ষে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসন, র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন দেবিদ্বারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক উন নবী তালুকদার। এর আগে উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, স্বাধীনতা স্তম্ভ ও গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ওমানী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী আব্দুস সামাদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাজমা বেগম,  উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা প্রভাষক মো. সাইফুল ইসলাম শামীম, মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নাজমা মোর্শেদ,  পৌর আওয়ামীলীগ নেতা হাজী মোসলেহ উদ্দিন মানিক,   প্রমুখ। 
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন,  ১৯৭১-এর ৩১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ১৫ সদস্যের পাকসেনার একটি দল কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ধরে পায়ে হেঁটে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের দিকে যাত্রা শুরু করলে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাকহানাদার দলটিকে দেবিদ্বারের ভিংলাবাড়ি এলাকায় সাধারণ জনতা প্রতিরোধ করে।  সেদিন মহাসড়কের ভিংলাবাড়ি থেকে জাফরগঞ্জ শ্রীপুকুরপাড় জামে মসজিদ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকায় পাকহানাদারদের সাথে মুক্তিকামী জনতা এক অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দিনব্যাপী এ যুদ্ধে ৩৩ জন শহীদ হন।  আহত হন বহু বাঙালী।  হত্যা করা হয় ১৫ পাকসেনাকে।পরে ১৪ এপ্রিল বরকামতা গ্রামে পাকহানাদাররা আক্রমণ চালায়।  এ খবর পেয়ে কমিউনিস্ট নেতা আবদুল হাফেজ ও আবদুল হালিম পুলিশের নেতৃত্বে হাজার হাজার বাঙালি মাত্র দুটি থ্রি-নট থ্রি রাইফেল ও লাঠি হাতে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে শত্রু সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।  রাইফেলের গুলিতে পাকবাহিনীর ৫ সেনা নিহত হলে তারা পিছু হটে।  কিন্তু ওই রাতেই পাকসেনারা পুরো বরকামতা গ্রামটিকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ৬ সেপ্টেম্বর দেবিদ্বার থানার বারুর গ্রামে হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বাচ্চু মিয়া, শহীদুল ইসলাম, আলী মিয়া, আবদুস সালাম, সফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোসেনসহ ৭ জন শহীদ হন। ১৭ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ বাঙালিকে ধরে এনে দেবিদ্বারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়। পাকসেনারা ধামতী ও ভোষনা গ্রাম দুটিকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ ঘাঁটি বলে মনে করতো।  সে কারণে ২৯ নভেম্বর পাকসেনাদের একটি বিশাল বহর হঠাৎ করেই আক্রমণ করে ভোষনা গ্রামের ১৬টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং ৬ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে।  এ দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রাজামেহের এলাকায় এক মাইন বিস্ফোরণে পাকসেনাদের ৭জন সদস্য নিহত হলে ওই এলাকার দু’পাশের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার সব বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।৪ ঠা ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী-মিত্রবাহিনী যৌথ আক্রমণ চালায় পাকহানাদারদের ওপর।  এসময় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতুটি মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়।মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংক বহর এদিন বুড়িচং বাহ্মণপাড়া হয়ে দেবিদ্বারে আসে।  হানাদাররা ওই রাতেই দেবিদ্বার ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়।  ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন দল দেবিদ্বার সদরে প্রবেশ করে।  দেবিদ্বারের জনতা স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে।