রায়পুর বধ্যভূমিতে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন
Published : Wednesday, 15 December, 2021 at 12:00 AM
আলমগীর হোসেন,দাউদকান্দি।।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তীতে দাউদকান্দির রায়পুর বধ্যভূমিতে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় রায়পুর ব্রিজ ও খালসংগ্ন বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি- মেঘনা) আসনের সংসদ সদস্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া। এরপরই বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেন করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে এই বধ্যভূমিতে ৯ জন শহীদের স্বজন, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, রায়পুর গণহত্যার গবেষক বাশার খান এবং মুক্তিযুদ্ধপ্রেমীরা রায়পুরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের লাগাতার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্থানীয় সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক এবং দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলাম খানের তত্ত্বাবধানের এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়।
মঙ্গলবার স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন ও নিবেদনে অংশ নেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলাম খান, দাউদকান্দি মু্ক্িতযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো: খোরশেদ আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুকান্ত সাহা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসাম্মৎ রোজিনা আক্তার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো: তারিকুল ইসলাম, জিংলাতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর হোসেন মোল্লা,
দাউদকান্দি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: জাকির হোসেন হাজারী, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবী এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ অন্যান্যরা।
এসময়, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। বর্বর এই গণহত্যার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বাশার খান।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৩ মে রায়পুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৯ জন নারী-পুরুষকে রায়পুর খালপাড়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই গণহত্যায় সহযোগিতা করে হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোসর- রাজাকাররা।
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ২০১৪ সালে একদল মাঠ গবেষককে সঙ্গে নিয়ে বাশার খান রায়পুর গণহত্যা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। স্থানীয় স্বাধীনতাবিরোধীদের থেকে বিভিন্ন বাধা আসলেও কাজটি এগিয়ে নিতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর ( অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল- আমিন সহযোগিতা করেন।
এতে সহকারী গবেষক হিসেবে কাজ করেন বর্তমানে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, জামালপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইলিয়াস সানি, মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক সৌরভ আহমেদ,দাউদকান্দি প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন এবং সাংবাদিক মো: ওমর ফারুক মিয়াজীসহ আরো কয়েকজন।
এরপর ২০১৬ সালে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও বাশার খানের সম্পাদনায় "কুমিল্লা ১৯৭১- রায়পুর গণহত্যা" শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ভূমিকা লিখেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সহযোগী সম্পাদক ছিলেন কথাসাহিত্যিক মোজাফ্ফর হোসেন। গ্রন্থটির প্রকাশের পর এলাকায় আলোড়ন তৈরী হয়। কারণ এর আগে রায়পুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের কোনো ধারণা ছিল না। কেউ কোনো কাজও করেনি।
রায়পুর গণহত্যায় শহীদরা হলেন- শহীদ ডাক্তার পাণ্ডব দেবনাথ, শহীদ শীতল চন্দ্র সরকার, শহীদ পাণ্ডব সাহা, শহীদ বিদিশীনী সাহা, শহীদ ফেলান সরকার, শহীদ শরৎ চন্দ্র সরকার, শহীদ সুধির বণিক, শহীদ কামিনী সুন্দরী দেবনাথ এবং শহীদ উমেশ সরকার (হারাই মিস্ত্রী)। সূত্র : মো. আল- আমিন ও বাশার খান রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে দাউদকান্দি’ গ্রন্থ, পৃষ্ঠা- ৪৬।