রণবীর ঘোষ কিংকর।
কুমিল্লার
চান্দিনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে অংশ নিয়েছে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ চারটি রাজনৈতিক দল। অপরদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে
নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের একাধিক প্রার্থী।
কেন্দ্রীয়
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি ও তার শরীকদলগুলো বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ
নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভাবে অংশ গ্রহণ না করলেও চান্দিনা উপজেলায় স্বতন্ত্র
প্রার্থীর ব্যানারে অংশ নিচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মী ও অনুসারীরা।
উপজেলার
১২টি ইউনিয়নের বিপরীতে ১০১জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
যাচাই-বাছাই শেষে এক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করার পর বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা
দাঁড়ায় একশ জনে। আর ওই একশ জন প্রার্থীর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত
১২ প্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ৮জন, বাংলাদেশ
কমিউনিস্ট পার্টি মনোনীত প্রার্থী ২জন, জাকের পার্টি মনোনীত ১জন এবং
স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৭৭জন।
ওই ৭৭জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর রাজনৈতিক
ইতিহাসের তথ্য নিয়ে জানা যায়, ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে বিএনপি’র
পদ-পদবী ও সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন ১৪জন, ২০দলীয় জোটের শরীকদল লিবারেল
ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) পদ-পদবী ও সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন ৫জন এবং
বিলুপ্ত হওয়া জামায়াত ইসলামী প্রার্থী রয়েছেন ১জন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই
ইউনিয়নের মূল প্রার্থীর সহযোগিতার লক্ষ্যে একাধিক প্রার্থী হয়েছেন।
খোঁজ
নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১নং শুহিলপুর ইউনিয়নে ১২জন প্রার্থীর মধ্যে
শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া বাকি ১১জনই স্বতন্ত্র। এর মধ্যে উপজেলা
বিএনপি উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি সদস্য মো. হাবিব উল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী
হয়েছেন। ২নং বাতাঘাসী ইউনিয়নে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে অবস্থান নিয়েছেন
উপজেলা এলডিপি সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ,
ওই ইউনিয়নে বিএনপি অনুসারী রয়েছেন আরও ৩জন।
৫নং কেরণখাল ইউনিয়নে বিএনপি
সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি’র আতিকুর রহমান। ৬নং বাড়েরা
ইউনিয়নে এলডিপি’র সাবেক নেতা ও ২০১১ সালে এলডিপি থেকে মনোনীত চেয়ারম্যান
জালাল উদ্দিনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
৭নং এতবারপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন
বিএনপি সদস্য কাউসার আহম্মদ কাকুল স্বতন্ত্র প্রার্থী। ৮নং বরকইট ইউনিয়ন
বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম, ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি
মো. মাজহারুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী।
৯নং মাইজখার ইউনিয়নে
গণতান্ত্রিক কৃষকলীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এর ভাতিজা
এলডিপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন এবং এলডিপি সমর্থিত জাকির হোসেন স্বতন্ত্র
প্রার্থী।
১১নং দোল্লাই নোয়াবপুর ইউনিয়নে জামায়াত এর সাবেক নেতা, ওই
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে
প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মো. শাহজাহান মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার আপন ভাই
সাবেক ছাত্র শিবির নেতা ও বর্তমান চান্দিনা উপজেলা যুবদল আহবায়ক কমিটির
যুগ্ম আহবায় এবং জেলা যুবদল সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান খান
স্বতন্ত্র প্রার্থী।
১২নং বরকরই ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান শামছুল আলম
রতন ও গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ খান বিএনপি অনুসারী স্বতন্ত্র প্রার্থী। ১৩নং
জোয়াগ ইউনিয়নে ওই ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের ভূইয়া
স্বতন্ত্র প্রার্থী। একই ইউনিয়নে বিএনপি’র অপর একটি গ্রুপ থেকে স্বতন্ত্র
প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা ছাত্রদল সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাবর।
জোয়াগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তাহের ভূইয়া জানান, দলীয়
সিদ্ধান্তে নয়। জনগণের অনুরোধে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ
নিয়েছি। আমার ইউনিয়নের জনগণকে সাথে নিয়েই রাজনীতি করতে চাই।
বরকইট
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম জানান, দলের সাথে আলোচনা
ছাড়াই অংশ নিয়েছি। নির্বাচন করবো। তাতে দলের কোন সমর্থন বা সহযোগিতা চাইনি
বা আশাও করিনি।
বাতাঘাসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক
চেয়ারম্যান শাহজাহান সিরাজ জানান, যেহেতু আমাদের রাজনৈতিক দল বা ঐক্যজোট
অংশ নেয়নি। সেহেতু এক মাস পূর্বেই আমি দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র
প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছি। জনগণ আমাকে চায়, আমি জনগণের
ভালবাসায় এগিয়ে যেতে চাই।
দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী
জামায়াত নেতা শাহজাহান মিয়া জানান, আমি ২০১৭ সালে জামায়ত ইসলাম থেকে
পদত্যাগ করি। এখন আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই।
এ ব্যাপারে
উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কাজী আরশাদ জানান, আমাদের দলের বা জোটের যারা
প্রার্থী হয়েছেন তারা কেউ আমাদেরকে অবহিত করেনি। দলের উচ্চ পর্যায়ের
সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদের ব্যাপারে
আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া
চান্দিনা উপজেলার ১২ ইউনিয়নে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন
১৯ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২০ ডিসেম্বর ও ভোট গ্রহণ ৫ জানুয়ারী।