Published : Thursday, 16 December, 2021 at 12:00 AM, Update: 18.12.2021 10:50:30 PM
আজ
১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য
হয়েছিল। বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিল বাংলাদেশ। আজকের এই দিনে আমরা স্মরণ
করছি সেই শহীদদের, যাঁরা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই লাল-সবুজের
পতাকা দিয়েছেন। স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদকে, যাঁরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী
ও তাদের দোসরদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। স্মরণ করছি সেই সময়ের কোটি
কোটি মানুষকে, যাঁঁরা হানাদার বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন সইতে না পেরে ঘরবাড়ি
ছেড়ে পরবাসী হয়েছিলেন, বনে-জঙ্গলে রাত কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন, নিজে না
খেয়েও একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এক বেলা খাওয়ানোর জন্য ব্যাকুলতা দেখিয়েছিলেন।
তাঁদের সবাই আমাদের তথা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নমস্য।
বাঙালি জাতি
যত দিন বেঁচে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গৌরব করবে, অহংকার করবে। আর ১৬ই
ডিসেম্বর তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিন, আনন্দের দিন হয়েই থেকে যাবে। কারণ
শতসহস্র বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনটিতেই বাঙালি জাতি
প্রথমবার প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করেছিল। বিশ্বের মানচিত্রে একটি
গর্বিত জাতি হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। যেসব স্বপ্নে
তাড়িত হয়ে লাখ লাখ মুক্তিসেনা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেশ স্বাধীন করেছিলেন,
তার অনেকই আজও পূরণ হয়নি। অর্থনৈতিক মুক্তি পুরোপুরি আসেনি। দেশ পুরোপুরি
রাজাকারমুক্তও হয়নি। তাই দিনটি নতুন প্রত্যয়েরও। ৫০তম বিজয় দিবসে আমাদের
শপথ হোক সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ধরে এগিয়ে
যাওয়া।
আমাদের তথা উত্তর প্রজন্মকে মনে রাখতে হবে, এই বিজয় এমনি
এমনি আসেনি। তার জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক রক্ত দিতে হয়েছে।
অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। সর্বশেষ যে পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের
পদানত করে রেখেছিল, তাদের সেই শৃঙ্খল ভাঙার কাজটি সহজ ছিল না। বায়ান্নর
একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন,
একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে
আমাদের সেই মুক্তির ক্ষেত্র তৈরি করে নিতে হয়েছিল। আর সে ক্ষেত্রে আমরা ঋণী
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের
মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর সেই
বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার চূড়ান্ত মন্ত্রে উজ্জীবিত
হয়েছিল। মহান বিজয় দিবসে আমাদের প্রত্যয় হোক সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে
মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ধরে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার
লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এখনো যেসব ষড়যন্ত্র চলছে তার
মূলোৎপাটন করা। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশকে ত্বরান্বিত করা এবং
সুখী, সমৃদ্ধ ও রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।