‘পাগলা ঘণ্টা’ বাজিয়ে র্যাবের ওপর হামলার অভিযোগ
Published : Wednesday, 29 December, 2021 at 12:00 AM
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় ‘পাগলা ঘণ্টা’ বাজিয়ে র্যাববের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সুয়াবিল বারোমাসিয়া চা বাগানে মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে এই হামলা হয়।
র?্যাবের দাবি, এ সময় হামলাকারীরা র?্যাবের অস্ত্র লুটের চেষ্টা চালিয়েছে। এ ঘটনায় এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ র্যাব সদস্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচ জনকে আটক করেছে র?্যাব।
হামলকারীরা মাদক কারবারির লোক দাবি করে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুপ অভিযোগ করেন, নতুন বছরকে সামনে রেখে চা বাগানের ভেতরে বিপুল পরিমাণ দেশীয় মদ মজুত করা হয়। র্যাব ওই মদের কারখানা ধ্বংস করে আসার সময় মাদক কারবারির লোকজন র্যাবের ওপর হামলা চালায়। এতে র্যাবের পাঁচ সদস্য কমবেশি আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, র্যাববের একটি দল সাদা পোশাকে বারোমাসিয়া চা বাগানের শ্রমিক ও বাংলা মদের কারবারি চিত্তরঞ্জন ও উজ্জলের চোলাই মদ তৈরির কারখানা ধ্বংস করে মদ তৈরির কারিগর রিপনকে আটক করে। পরে বিপ্লব নামের আরও এক মদ ব্যবসায়ীর কারখানায় অভিযান চালিয়ে তাকেও আটক করে। তাদেরকে গাড়িতে তোলার সময় ডাকাত এসেছে বলে ‘পাগলা ঘণ্টা’ বাজিয়ে দেয়। এ সময় মাদক কারবারিদের ভুল নির্দেশনার কারণে ১০০/১৫০ শ্রমিক ভুল বোঝাবুঝি থেকে র্যাবের ওপর হামলা চালায়। বাগানের অভ্যন্তরে কোনও দুর্ঘটনা কিংবা বিপদের অনুমান করে সংকেত হিসেবে এই ঘণ্টা বাজানো হয়। ঘণ্টা বাজানোর পর শ্রমিকরা একজোট হয়ে বিপদ মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। এটি বাগান শ্রমিকদের কাছে ‘পাগলা ঘণ্টা’ নামে পরিচিত।
র?্যাবের অভিযোগ, ঘণ্টাটি বাজানোর পর বাগানের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক সাধারণ শ্রমিক এসে র?্যাব সদস্যদের ঘিরে তাদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে র?্যাব সদস্যদের মারধর করেন বেশ কয়েকজন উশৃঙ্খল শ্রমিক। এতে ৫ র?্যাব-৭ এর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নিয়াজ মোহাম্মদ চপল (৩০) ও উপ-সহকারী পরিচালক আবদুস ছালাম (৪২) গুরুতর আহত হন। এ সময় মোস্তাফিজুর রহমান (৩২), শাহীন আলম (৩০), মোমিনুল হোসেন (২৯) নামে তিন র্যাব সদস্য সামান্য আহত হন। সংঘর্ষের সময় শ্রমিকরা র্যাবের কাছ থেকে অস্ত্র লুটের চেষ্টা চালায়। অস্ত্র লুটের চেষ্টাকালে র্যাববের এক সদস্যের শটগান থেকে গুলি বের হয়ে মনতোষ (৫৫) নামে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন।
আহত শ্রমিক ও র্যাব সদস্যদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে প্রথমে নাজিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে গুরুতর আহত অবস্থায় চমেকে পাঠানো হয়। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নিয়াজ মোহাম্মদ চপলকে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সংঘর্ষের সময় বাগানের শ্রমিকরা র্যাবের ব্যবহৃত একটি হায়েচ গাড়ি ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে। পরে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন র্যাব-৭ এর উপ-পরিচালক মেহেদী হাসান, পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাহাদাত হোসেন ও ভূজপুর থানার ওসি হেলাল উদ্দীন ফারুকী।
সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত বাগান এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রাশিদুল হক জানান, এখনও পর্যন্ত র্যাববের পক্ষ থেতে আনুষ্ঠানিক কোনও অভিযোগ পাননি তারা।