রণবীর ঘোষ কিংকর।
কুমিল্লার চান্দিনায় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছে প্রশাসন।
সোমবার
(৩ জানুয়ারী) সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এর
অফিস সহকারি মোস্তফা কামাল মুন্সি বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা
১০০ জনকে আসামী করে চান্দিনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে রবিবার
(২ জানুয়ারী) রাতে ওই ঘটনার জবাব চেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. সাইফুল
ইসলাম শিপনকে শোকজ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার।
একই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তাজুল ইসলাম (৩৩) নামের এক ব্যক্তিকে ১৫
দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
কুমিল্লা জেলা
প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ওই সাজা
প্রদান করেন। দন্ডপ্রাপ্ত তাজুল ইসলাম চান্দিনার মন্থেরহাটখোলা গ্রামের
আব্দুল মালেক এর ছেলে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন,
রবিবার (২ জানুয়ারী) বিকেলে উপজেলার বরকরই ইউনিয়নে নির্বাচনী আচরণ বিধি
উপেক্ষা করে মঞ্চ তৈরি করে জনসভা করছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল
ইসলাম শিপন। ওই জনসভার কথা শুনে ঘটনাস্থলে হাজির হন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক
কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।
এসময়
প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মজুমদার শিপনকে জিজ্ঞাসা করলে তার সমর্থকরা সরকারি
কাজে বাঁধা প্রদানসহ বলপ্রয়োগ ও অন্যায় ভাবে আটক করার চেষ্টা করে। এমনকি
ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার ও সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার
আমিরুল্লাহ’র নেতৃত্বে চান্দিনা থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, ওই
ঘটনায় একজন ১৫দিনের সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও কুমিল্লা জেলা
প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারি মো. মোস্তফা কামাল মুন্সি বাদী হয়ে ৪জনের
নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১শ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শিপন জানান, আমাকে শোকজ করার পর সোমবার (৩ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় আমি ওই শোকজের লিখিত জবাব দিয়েছি।
প্রসঙ্গত,
গত রবিবার (২ জানুয়ারী) চান্দিনা উপজেলার বরকরই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীক
প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম মজুদার শিপন উঠান বৈঠকের নামে
সভামঞ্চ তৈরি করে নির্বাচনী প্রচারণা করেন। এসময় আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে
হাজির হয় ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় ভ্রাম্যমান আদালতের সাথে আওয়ামী লীগ
নেতৃবৃন্দের মধ্যে তুমুল বাক বিতন্ডা। এ পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের
গাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারার অভিযোগে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী
অফিসার, সহকারি পুলিশ সুপার ও থানার অফিসার ইন-চার্জ। দ্বিতীয় দফায় তাদের
সাথেও চলে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটুসহ আওয়ামী লীগ
নেতৃবৃন্দের বাক বিতন্ডা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার
(ইএনও), আর্ম পার্সনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) নামের বিশেষ গাড়িসহ ঘটনাস্থলে
হাজির হয় পুলিশ। ওইসব ঘটনায় পুরো নির্বাচনী এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
এসময়
ফেইসবুক লাইভে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুন নাহার
বলছেন, ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে ইট-পাটকেল কে ছুড়েছে? কেন ছুড়েছে? এসময়
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা নৌকা
প্রার্থীর পক্ষে সভা করছিলাম। হঠাৎ ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এসে
আমাদেরকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব কিছু গুটিয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এমনকি
স্থানীয় এমপি’র বরাদ দিয়ে পাঁচ জনের বেশি দেখলে আটকের হুমকি দেন। অনেকক্ষণ
বাক বিতন্ডার এক পযায়ে দুই পক্ষের মধ্যে নিষ্পত্তি হলেও দুই পক্ষের
উত্তেজনার ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলা জুড়ে।