কভিড মহামারি ও অন্যান্য
কারণে শহরে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরা জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে
ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের 'ঘরে ফেরা' শীর্ষক তহবিল গঠনের
উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমরা মনে করি, এটি শুধু সময়োচিত পদক্ষেপই নয়;
জরুরিও বটে। মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত সমকালের প্রতিবেদনে প্রকাশ, ৬ শতাংশ
সুদে জামানত ছাড়াই একজন ব্যক্তি ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে
পারবেন। তহবিল থেকে স্বল্প পুঁজির স্থানীয় ব্যবসা থেকে শুরু করে মৎস্য চাষ
কিংবা হাঁস-মুরগি পালন, তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকেন্দ্র ও অন্যান্য সেবা উৎসারী
কর্মকাণ্ড, এমনকি কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ফসল বিপণনেও ঋণ দেওয়ার কথা বলা
হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ ঋণ গ্রামীণ অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার করবে।
ঋণ
দেওয়ার ক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের
বিষয়কে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটিও তাৎপর্যপূর্ণ। এটা স্পষ্ট, গত
প্রায় দুই বছরে করোনা মহামারির কারণে শহর থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মজীবী
মানুষ কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। গ্রামে তাদের আবাসনের
ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই হয়তো সেভাবে কাজ জোটাতে পারেনি। 'ঘরে ফেরা' তহবিল
তাদের জন্য হতাশার পরিবর্তে আশার আলো হিসেবে দেখা দিতে পারে। বলাবাহুল্য,
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনেই বলা হয়েছে, করোনা দুর্যোগে আগে
নেওয়া সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায়ই এ তহবিল গঠন
করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কামার, কুমার, জেলে,
ভূমিহীন কৃষক, হকার, দোকানি এমনকি রিকশাচালকদের জন্যও এমন সহজ শর্তে ঋণ
দেওয়ার জন্য তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে সরকার করোনাকালে দেশে
ফেরা প্রবাসীদের জন্যও ঋণ সহায়তা কর্মসূচি চালু করে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীদের
জন্যও সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করে। আমরা দেখছি, এসব তহবিল ও প্রণোদনা
প্যাকেজের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সব পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছানোর এ
প্রচেষ্টা সাধুবাদযোগ্য।
তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে- উপযুক্ত প্রাপকই যেন
'ঘরে ফেরা' তহবিলের মাধ্যমে ঋণ পায়। সহজ শর্তের অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রে
যেমন অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকে গিয়েও অনেকে সহযোগিতা পান না; অনেকের জন্য
কাগজপত্র সংগ্রহ করাও কষ্টকর কিংবা যাদের ঋণ পাওয়ার কথা তারা না পেয়ে
অন্যরা পেয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে এমন ভালো উদ্যোগের সুফল বাস্তবে
দেখা যাচ্ছে না। আবার সংশ্নিষ্টরা না জানার কারণেও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও
ঋণ নিতে পারছে না। আমরা চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়গুলো দেখবে। একই সঙ্গে
'ঘরে ফেরা' তহবিল গঠনের বিষয়টি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কাছে পৌঁছাতে
প্রচারের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন
অনুসারে, মূলত রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এ তহবিল
বিতরণ করতে পারবে। তবে বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাংকেরও এ সেবা দেওয়ার সুযোগ
রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, অধিকসংখ্যক ব্যাংকের মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া হলে
এবং বিশেষ সংশ্নিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখাগুলোতেই ঋণ দেওয়ার
ব্যবস্থা করলে শহরফেরত গ্রামের মানুষের জন্য সেবাপ্রাপ্তি সহজ হবে। বস্তুত,
বাংলাদেশ ব্যাংক অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব সব নেটওয়ার্ক,
তথা শাখা-উপশাখা, এজেন্ট, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমেও
গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ দেওয়ার অনুমতি প্রদান করার মাধ্যমে সেবা মানুষের
দোরগোড়ায় পৌঁছানোর সে কাজটিই করেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সাম্প্রতিক
সময়ে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার বিস্তৃতি যেমন
ঘটেছে, তেমনি নানা উন্নয়ন কার্যক্রমও প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছে। এর
ফলে সেখানে মানুষের কর্মসংস্থানও আগের চেয়ে বেড়েছে। এভাবে গ্রামের সমৃদ্ধি
অব্যাহত থাকলে কর্মসংস্থানের আশায় শহরমুখী মানুষের স্রোত ঠেকানো সম্ভব
হবে। রাজধানীসহ শহরের ওপর যেভাবে চাপ বাড়ছে, তাতে গ্রামীণ অর্থনীতি
শক্তিশালীকরণই ভালো বিকল্প। গ্রামে উদ্যোক্তা বাড়লে কর্মসংস্থানের পথ আরও
প্রশস্ত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের 'ঘরে ফেরা' তহবিল সেখানেও কার্যকর ভূমিকা
রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।