ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ভারতে ওমিক্রনের ঢেউ-বাংলাদেশে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা
Published : Thursday, 6 January, 2022 at 12:00 AM
ভারতে ওমিক্রনের ঢেউ-বাংলাদেশে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভাঅধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ||
বছরের শেষের দিকে সংক্রমণ বাড়বে বলে অনেকেরই ধারনা ছিল কিন্তু সেটা যে বাস্তবে রূপ নেবে তার অনুমান অনেকেরই ছিল না। ২৮ শে ডিসেম্বর’২১ গোটা ভারতজুড়ে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৬৩৫৮ জন; ৩জানুয়ারি’২২ পর্যন্ত সে সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৩৩৭৫০ জনে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ ছিল মহারাষ্ট্রে। তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কাও ঐ রাষ্ট্রেই সর্বোচ্চ। ৩জানুয়ারি’২২ সকাল থেকে ২৪ ঘন্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ১১৮৭৭ জন। মহারাষ্ট্রের পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে ১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৫৩ জন। রাজধানী দিল্লীর অবস্থাও খারাপ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাবু কেজরিওয়াল স্বয়ং আক্রান্ত। ০৩/০১/২২ এ দিল্লীতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪,০৯৯ জন, দু:সংবাদটি শুনিয়েছেন দিল্লীর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। তাঁর বরাত দিয়ে পিটিআই জানিয়েছে, রাজধানীতে সম্প্রতি যত করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার ৮৪ শতাংশের মধ্যে ওমিক্রন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, গত ৩০ ও ৩১ডিসেম্বর যত লোকের নমুনা সংগ্রহ হয়েছে তার জীবনবিন্যাসে দেখা যায় ৮৪ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। সরকারি হিসেবে ভারতে ২৩টি রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সবচেয়ে বেশী মহারাষ্ট্রে (৫১০) এরপর দিল্লীতে (৩৫১)। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে-মৃত্যুর সংখ্যা কম এবং হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনও হচ্ছে কম।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজ্যে রাজ্যে জারি করা হচ্ছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা, মহারাষ্ট্র, দিল্লী, পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কিছু রাজ্যে স্কুল, কলেজ, বিনোদন কেন্দ্র সমূহ বন্ধ রাখা হয়েছে। অফিস হাজিরা ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। বিভিন্ন যানবাহন ও ট্রেন চলাচলে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রসমূহ খালি করা হচ্ছে। দিল্লী ও মুম্বাই থেকে কোলকাতায় বিমান চলাচল করবে সপ্তাহে দুদিন। করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়ালেও রাজ্য সমূহে রাজনৈতিক জনসভার উপর কোন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধান সভার নির্বাচনেও চলছে রমরমা রাজনৈতিক জনসভা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সমালোচিত হতে হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ না করার জন্য।
ফ্রান্সে দ্বিতীয় দিনের মতো ইউরোপের রেকর্ড সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় দুই লক্ষ কোভিড পজিটিভ। যুক্তরাষ্ট্রে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ লক্ষ ৬৫ হাজার রোগী চিহ্নিত হয়েছে। ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালে রোগীর সংখ্যা পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে মাত্র একমাসের মধ্যে। ওমিক্রন ভেরাইটিটি ডেল্টার চেয়ে বেশি প্রাধান্য বিস্তার করেছে কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ অসুস্থতার ভয়াবহতা সৃষ্টি করে না বলে প্রাথমিক গবেষণায় বলা হয়েছে। শুধুমাত্র টিকার দুটি ডোজ এ ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে অসমর্থ বলে বুস্টার ডোজের প্রচলনে বিজ্ঞানীরা সুপারিশ করেছেন। ডঐঙ এর প্রধান ডা: আধনাম জানিয়েছেন যে ২০২২ এ করোনা মহামারির শেষ বছর হতে পারে। কিন্তু এর জন্য উন্নত দেশগুলো, উন্নয়নশীল ও অন্যান্য দেশগুলোর সমঝোতা করতে হবে। সমস্ত দেশগুলোকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে থাকা ভ্যাকসিক অন্যান্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে দিতে হবে। ডঐঙ এর নির্দেশকের পুরো বিশ্বাস ২০২২ সালে মহামারি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সংকীর্ণ রাষ্ট্রবাদ এবং ভ্যাকসিনের মজুতদারী যদি বন্ধ না হয় তবে তা নাও হতে পারে। ভ্যাকসিনের অসামঞ্জস্য ওমিক্রনের মত ভ্যারিয়েন্টের দাপট বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভ্যাকসিনের অসমান বিতরণ যত বেশি থাকবে ভাইরাস তত বেশি বিকশিত হতে থাকবে। বুরুন্ডি, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, চাদ এবং হাইতির মত দেশগুলিতে টিকাকরণ হওয়া লোকের সংখ্যা এক শতাংশের কম। যেখানে বেশি আয়ের দেশগুলোতে টিকাকরণের পরিসংখ্যান ৭০ শতাংশের বেশি হয়ে গিয়েছে। এ অসামঞ্জস্যের সঙ্গে লড়াই করতে হবে গোটা বিশ্বকে। তাহলেই করোনাভাইরাস ফিরে আসতে সাহস পাবে না। গোটা দুনিয়ায় দ্রুততার সঙ্গে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া নিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওমিক্রনে তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন যাদের ৮০ শতাংশের বেশি বুস্টার ডোজ দেয়া হয়নি।
০৩জানুয়ারি সচিবালয়ে ওমিক্রন নিয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক বসে। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সভাশেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের পরিস্থিতি এখনো হয়নি। আপাতত: প্রাথমিক পদক্ষেপ নেই তারপর দেখা যাক কি দাঁড়ায়। বিমান চলাচলের বিষয়ে মন্ত্রী মহোদয় বলেন, অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একজন যাত্রী বিমানে উঠেন। তাদের ভ্যাকসিন দেয়া থাকতে হয়। আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হয়, এ্যন্টিজেন টেস্ট করতে হয়। কাজেই আর নতুন কোন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নাই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে ঢিলা ভাব পরিত্যাগ করে জোরদার করতে বলা হয়েছে। হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০টি স্থাপন করা হয়েছে এবং করোনা চিকিৎসায় ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত। শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, সংক্রমণ ৩.৪ শতাংশ হয়েছে যেটা একের নীচে নেমে গিয়েছিল। তবে মৃত্যুহার এখনও কম আছে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যুহার বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারও সেই লকডাউনের কথা চলে আসবে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরে যথাযথ স্ক্রীনিং করা হচ্ছে। কেউ সংক্রমিত থাকলে তাদের কোয়ারিন্টিনে রাখা হবে পুলিশ প্রহরায় যাতে কোয়ারিন্টিনে থাকা লোক বেরিয়ে যেতে না পারে। সব ক্ষেত্রেই মাস্ক পড়তে হবে। বাসে ও ট্রেনে উঠলে মাস্ক পড়তে হবে। মসজিদে গেলে মাস্ক পড়তে হবে। সব জায়গায় মাস্ক পড়তেই হবে। না পরলে জরিমানা করা হবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে মোবাইল কোর্টর মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হবে। দ্রুত টিকা গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। টিকা যারা নিয়েছে তারা মাস্ক পরা অবস্থায় রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে। অফিসে যেতে পারবে এজন্য টিকার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। যারা টিকা নেবে না তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে পারবে না। যদি কোন রেস্টুরেন্ট টিকায় সনদ ছাড়া কাউকে খেতে দেয় তবে সে রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হবে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল