জহির শান্ত:
কুমিল্লার
তিন উপজেলার ২৫ ইউপিতে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৫
জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত জেলার চান্দিনা, নাঙ্গলকোট ও
লালমাই উপজেলার মোট ২৫টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ হয়। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি
ঘটনা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন
ভোটাররা। শীতের কুয়াশা ভেদ করে সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ছিলো ভোটারদের
উপচে পড়া ভিড়। সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে একে-একে ভোট দিয়ে
হাসিমুখে বাড়ি ফিরেন তারা। তবে ভোট চলাকালে চান্দিনা, নাঙ্গলকোট ও লালমাই
উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার খবর
পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কুমিল্লার চান্দিনার বরকইট ইউনিয়নের বরকইট উচ্চ
বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর গাড়ি থেকে ডিবি-পুলিশ ও
বিজিবির স্টিকার জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকা
জরিমানা এবং গাড়ির চালককে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অপরদিকে ভোট চলাকালে নাঙ্গলকোটের পেরিয়া ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী হুমায়ুন
কবির মজুমদারকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিটি কেন্দ্র ও এর বাইরে প্রচুর
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিলো। ভোট চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র
পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক
আহমেদ, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ দুলাল তালুকদারসহ ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাগণ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান কুমিল্লার কাগজকে
জানান, ভোটার উপস্থিতি ছিলো সন্তোষজনক। সকাল থেকেই সব কেন্দ্রে ভোটারদের
উপচেপড়া ভিড় থাকায় শুরুর দিকে ভোটগ্রহণে কিছুটা দেরি হলেও পরবর্তীতে তা
স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে মিলিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত একটি নির্বাচন
আমরা উপহার দিতে পেরেছি।
সকাল সোয়া ১০টায় চান্দিনা উপজেলার বরকইট
ইউনিয়নের বরকইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের
ভিড়। তখনও কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। এই শীত-সকালেই আলাদা আলাদা দীর্ঘ সারিতে
দাঁড়িয়ে রয়েছেন নারী ও পুরুষ ভোটাররা। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাজী
মফিজুল ইসলাম জানান, এ কেন্দ্রে ২৬৯০ ভোটারের মধ্যে সকাল ১০টা পর্যন্ত
কাস্ট হয়েছে প্রায় ৫০০ ভোট।
সকাল ১১টায় কেরনখান কেন্দ্রে গিয়েও দেখা
যায়, ভোটারদের লম্বা লাইন। তবে এ কেন্দ্রে কুয়াশার কারণে সকালের দিকে ভোটার
উপস্থিতি কিছুটা কম ছিলো বলে জানিয়েছেন প্রিসাইডিং অফিসার এনামুল হক
সরকার। ১৪৩৮ ভোটের মধ্যে ওই সময় পর্যন্ত কেন্দ্রটি কাস্ট হয়েছে ৪০০ ভোট।
ভোটারদের লম্বা লাইনের একই চিত্র দেখা দেখা গেছে বাড়েরা দক্ষিণ সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও। কেন্দ্র
দু’টির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট হচ্ছে।
মানুষের উপস্থিতিও সন্তোষজনক। কথা হয় ভোটের লাইনে দাড়িয়ে থাকা শিউলি রাণী
নামে এক স্কুল শিক্ষিকার সাথে। তিনি জানান, মানুষ আনন্দের সাথে ভোট দিচ্ছে।
আমি প্রায় ঘন্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। ভোট দিতে এসেছি, শান্তিপূর্ণ
পরিবেশ, ভালোই লাগছে।
একই কেন্দ্রে কথা হয় জয়নাল আবেদীন নামে এক বৃদ্ধ
ভোটারের সাথে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর এমন স্বতস্ফূর্ত ও উৎসবের আমেজে ভোট
হচ্ছে। ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখে ভালো লাগছে।
বেলা আড়াইটার দিকে কিছুটা
বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় খিরাসার মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের
পাশে। এখানে প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল দেখা দিলে নির্বাচনের
দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব গিয়ে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষের চেয়ে মহিলা
ভোটারের উপস্থিতি কয়েকগুণ। পরে ভোটের গতি বাড়াতে কিছুসংখ্যক মহিলা ভোটারকে
পুরুষ বুথে আলাদাভাবে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
একই কেন্দ্রে অনিয়মের
অভিযোগে চেয়ারম্যান পদে টেবিল ফ্যান প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট ফরহাদকে
দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভোটারদের
ব্যালটপেপার তাদের কাছ থেকে নিয়ে ব্যালট বাক্সে ফেলে দেন।
অপরদিকে
কুমিল্লার লালমাইয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে অবৈধভাবে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের দায়ে
মেহেদী হাসান বাপ্পি নামের আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড
দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার বেলা পৌনে ১১ টার দিকে উপজেলার ভুলুইন
দক্ষিণ ইউনিয়নের গোলাচোঁ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার কাছ থেকে ৫৭
হাজার টাকা জব্দ করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত কাজী মেহেদী হাসান বাপ্পি লালমাই
উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বলে জানা গেছে।
এ ধরনের কয়েকটি
বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ৫ম ধাপে কুমিল্লার ৩ উপজেলার ২৫ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ
ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোট চলাকালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল
হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ দুলাল
তালুকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে নির্বাচন
নিয়ে তাদের সন্তোষ্টির কথা প্রকাশ করেছেন।