ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
চিকিৎসা সেবায় এক ধাপ এগিয়ে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
Published : Sunday, 16 January, 2022 at 12:00 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর ।।
শনিবার সকাল তখন প্রায় সাড়ে ১০টা। মাইক্রোবাস যোগে এক প্রসূতিকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলেন রোগীর স্বজনরা। দ্রুত ছুটে আসলেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স। প্রসব ব্যথায় অস্থির প্রসূতি গাড়ি থেকে কোন ভাবেই নামতে চাইছেন না। সমস্যার কথা জেনে গাড়িতেই স্বাভাবিক প্রসব করালেন কর্তব্যরত চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও নার্সরা। ডেলিভারী শেষে মা ও সন্তানকে হাসপাতালের পর্যবেক্ষণ কক্ষে নিয়ে যাবতীয় চিকিৎসা সেবা।
ওই হাসপাতালে প্রসূতিদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা ওষুধের প্যাকেট। সিজারিয়ন ও স্বাভাবিক প্রসূতিরা হাসপাতালে ভর্তি হতেই সুন্দর প্যাকেটে মোড়ানো উপহারের ন্যায় ওষুধ সামগ্রী তাদের হাতে তুলে দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।
যে প্যাকেটে একজন প্রসূতির চিকিৎসার যাবতীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী রয়েছে। যাতে কোন প্রসূতিকেই ওষুধ বাহির থেকে কিনে আনতে না হয়।
ওই হাসপাতালটিতে রয়েছে  গাইনি ও সার্জারীর জন্য পৃথক দুইটি অপারেশন থ্রিয়েটার ও আধুনিক সুসজ্জিত ৪টি ডেলিভারী অবজারভেশন কক্ষ এবং সেইফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন ইউনিট। বিনোদনের জন্য রয়েছে প্রতিটি কেবিনে এলইডি টিভি। রয়েছে ক্যাঙ্গারো মাদার কেয়ার ইউনিট ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই মিলছে এমন সেবা। ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩১ শয্যার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। আদৌ ৫০ শয্যার লোকবল না থাকা সত্বেও ২০২১ সালের জানুয়ারীতে চালু হয়েছে পৃথক ২টি অপারেশন থ্রিয়েটর। মাত্র এক বছরেই ৪শতাধিক প্রসূতি মায়ের সন্তান ডেলিভারী করতে সক্ষম হয়েছে হাসপাতালটি। যার মধ্যে ৫০টি সিজারিয়ন ও প্রায় সাড়ে ৩শ নরমাল ডেলিভারী।
শুধু প্রসূতি মায়ের চিকিৎসাই নয়। চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পার্শ্ববর্তী দেবীদ্বার, বুড়িচং ও বরুড়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের রোগীরা সেবা গ্রহণ করে থাকেন প্রতিদিন। দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন হাসপাতালটিতে প্রায় প্রতিদিনই চিকিৎসা নিচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতরা রোগীরা। আউটডোরেও রোগীর কমতি নেই। গড়ে ৩-৪শ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করছেন নিয়মিত।
ওই হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন কোন প্রাইভেট হাসপাতাল। আগত কোন রোগী আসলেই ছুটে আসছে কর্তব্যরতরা। অপেক্ষমান রোগী ও স্বজনদের বসার জন্য রয়েছে বসার আধুনিক আসন। যে কোন রোগীদের চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে ‘ফাস্ট ডোজ’ সেবা। রোগ নির্ণয়ে অধিকাংশ রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ২৪ ঘন্টা ইসিজি, ডিজিটাল এক্স-রে, জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষা নির্ণয় ও বিনামূল্যে চিকিৎসা। সাপে কামড়ানো রোগীর জন্য রয়েছে ‘এন্টি স্ন্যাক ভেনাম’ চিকিৎসা ব্যবস্থা। আরও রয়েছে দাঁতের আধুনিক চিকিৎসা সেবা।
সার্জারী বিভাগে হচ্ছে এপেন্ডিসাইটিস, হার্ণিয়া, হাইড্রোসিল সহ অনেক মাইনর অপারেশন। রোগী পরিবহনে রয়েছে ভারতীয় উপহার লাইভ সাপোর্ট আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্সসহ ৪টি সচল এ্যাম্বুলেন্স।
ভর্তিকৃত রোগীদের ওষুধও ট্রলি যোগে প্রতিটি বেডে নিয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত নার্সরা। রোগীর ওষুধের সময় হলে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন তারা। ভর্তিকৃত রোগীর স্বজনদের খাবারের জন্য রয়েছে ডাইনিং রুম।
নিরাপত্তা ও আধুনিকতায় এগিয়ে রয়েছে হাসপাতালটি। এইচ.ডি ও নাইট ভিশিন ৩২টি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে নিরাপত্তা। সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে সেন্ট্রাল ওয়াইফাই। সৌন্দর্য বর্ধণে ফুলের বাগান ও বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোকিত হাসপাতাল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত উন্নত মুক্তিযোদ্ধা কেবিন। চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের সাথে সভা সমাবেশের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত আধুনিক হল রোম। এমন সেবায় সন্তুষ্ট রোগী ও এলাকার জনগণ।
রোগী সাবিনা আক্তার জানান, গত বৃহস্পতিবার আমার দ্বিতীয় সন্তান এ হাসপাতালে জন্ম নেয়। আসার পর সেবার ধরণ  দেখে আমি তো হতবাক! আগে জানতাম সরকারি হাসপাতালে সেবা নেই। এখন দেখি তার উল্টো।
ওই রোগীর মাতা নূরজাহান জানান, এখানে আনার পর একটি ওষুধও আমাকে বাহির থেকে কিনতে হয়নি। সময় মত তারাই (নার্সরা) আমার মেয়েকে ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছেন। এমন পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভাল সেবা পেলে মানুষ কখনও প্রাইভেট হাসপাতালে যাবে না।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসান জানান, চান্দিনার সাংসদ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত দেশের একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলমও চান্দিনার। তাদের একান্ত প্রচেষ্টা ও জনগণের সহযোগিতায়  চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি একটি আধুনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপান্তরের চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি প্রাইভেট হাসপাতাল মুখী রোগীদের ফিরিয়ে আনতে। সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, আমরা রোগীদের পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যথাযথ চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করায় এখন প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীর সেবায় আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং পর্যাপ্ত জনবল থাকলে আমাদের সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।